১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘বইন্যা মোর সবকিছু লইয়া গ্যাছে’

‘বইন্যা মোর সবকিছু লইয়া গ্যাছে’ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘বইন্যা মোর সবকিছু লইয়া গ্যাছে, এহন মুই ক্যামনে বাইচ্চা থাকমু’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করছে ৭২ বছর বয়সী আবুল কাশেম চৌকিদার। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মাথা গোছার একমাত্র ঠাই হারিয়ে নিঃস্ব এখন তিনি।

গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গলাচিপা উপজেলায় ৯৪৭টি পরিবারের বাড়িঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তারা এখন মানবেতর বসবাস করছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩৫ শ’ পরিবার।

ভূমিহীন আবুল কাশেম চৌকিদার গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের নিজ হাওলা গ্রামে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের বাইরে ছোট ঘর তুলে স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও নাতি জিসানকে নিয়ে বসবাস করত। তিনি ইউনিয়নের চৌকিদার হিসেবে কাজ করত। অবসরের পর প্রতিদিন নদীতে ছোট জাল দিয়ে মাছ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলত।
এছাড়া তিনি দিনমজুর হিসেবেই কাজ করতেন। কাজ না করলে পরের বেলা অনাহারে থাকতে হয়। এ যেন- নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

আবুল কাশেম জানান, ‘বইন্যার দিন বিয়াল (বিকেল) বেলা বউ আর নাতিকে ওয়াপদার উফড়ে থুইয়া ঘরের মালামাল আনতে গেলে, মুই যাইয়া আর কিছুই পাই নাই। নদীর জোয়ার্ইরা পানিতে মোর বাড়ি ঘর হগল কিছু ভাষাইয়া লইয়া গেছে। ঘরে আধা বস্তা চাউল ছিল, তাও লইয়া গেছে পানিতে। সকাল বেলা একখান রুডি (রুটি) খাইছি। পরের ব্যালায় (বেলা) ভাত জুটবে কিনা জানি না।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘর বাড়ি হারিয়ে তিন সদস্যের পরিবারের ঠাই হয়েছে ছোট ছাপড়ি ঘরে। ঘরের খালি জায়গা তক্তা পেতে বাস করছে। খবর সংগ্রহের জন্য সেখানে গেলে দেখা যায় করুণ দৃশ্য। এ সময় বৃদ্ধ আবুল কাশেমকে একটি ছোট ডোবা সেচে মাছ ধরতে গেছে। তা বিক্রি করে চাল কিনবে সে। তবে মাছের সন্ধান না পেলে হয়ত অভুক্ত থেকে যাবে পরিবারটি।

ত্রাণ সহায়তার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, বইন্যার পর থেকে এহন তামাইত (পর্যন্ত) অল্পটু চিড়া আর গুড় পাইছ। আর কিছুই পাই নাই। আশপাশের বাড়ি ঘর থাইক্যা কিছু খাওন (খাবার) দিছিল। এহন মুই কি দিয়া কি করমু। ঘরের চাউল কিনমু ক্যামনে আর ঘর তুলমু ক্যামনে।

রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মো: হাফিজুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বন্যার পর সহায়তা হিসেবে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, দুইটি মোমবাতি, গ্যাসলাইট ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে।

গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র দাস জানান, ত্রাণ এখন আসে নাই, ত্রাণ পাওয়া মাত্র বিতরণ করা হবে।
গলাচিপা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, এ ধরনের পরিবার থাকলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement