মির্জাগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ
- উত্তম গোলদার, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
- ১৫ মে ২০২৪, ১০:০৬
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পায়রা নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরে। বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানের অবস্থা খুবই নাজুক ও নড়বড়ে। সামান্য স্রোতে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এই অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা, নষ্ট হবে ঘরবাড়ি ও ফসল। পায়রায় যেকোনো মুহূর্তে বসতভিটাসহ ফসলি জমি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ভেবে চিন্তিত নদী তীরবর্তী বসবাসরত লোকজন।
ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে পাঁচটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বর্ষা এলেই ভয় আর আতঙ্কে তাদের দিন কাটে। কখন যেন পায়রার ভাঙনে সহায়সম্বলটুকু চলে যায়।
উপজেলার কাকড়াবুনিয়া বাজার ও গোলখালী স্ললিসগেটটি হুমকির মুখে রয়েছে। স্রোতের তোড়ে বিলিয়ে যেতে পারে পায়রার বুকে। প্রতি বছরই এভাবে পায়রা পাড়ের বসতিদের জীবন পার করতে হয়।
পায়রা পাড়ের লোকদের অভিযোগ, বর্ষা শেষে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো নাম মাত্র মাটি দিয়ে সংস্কার করা হয়।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়ে পায়রা নদীর বেড়িঁবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে উপজেলার চরখালী গ্রামে মারা যায় প্রায় ৮৫ জন নারী-পুরষ, শিশু-বৃদ্ধা। সিডরের পর থেকে পায়রা নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষগুলো আতঙ্কের মধ্যে বাস করেন।
জানা গেছে, পায়রা নদীর বিরামহীন ভাঙনে ছোট হচ্ছে মির্জাগঞ্জের মানচিত্র। পায়রার তীব্র স্রোতে উপজেলার পিপঁড়াখালী শাহজাহান হাওলাদার বাড়ি-সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি অরক্ষিত হওয়ায় বসতবাড়িসহ কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে।
এছাড়াও প্রতিনিয়তই ভাঙনের কবলে নদীর গর্ভে বিলিয়ে যাচ্ছে উপজেলার গোলাখালী, চরখালী, মেহিন্দাবাদ, পিঁপড়াখালী, সুন্দ্রা কালিকাপুর, চিংগরিয়া, কাকড়াবুনিয়া, রামপুর, সন্তোষপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ। ইতোমধ্যে পায়রা নদী গিলে নিয়েছে, পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রাকালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামপুর দাখিল মাদরাসা। আর এসব এলাকার বর্তমান বেড়িবাঁধ খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা এলেই ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ওই সব এলাকার ফসিল জমি ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেড়িবাঁধগুলোর এমনই দুরবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে যা পায়রার দু’একটা ঢেউয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ভয়াং এলাকার আলী আকবরসহ উপজেলার পায়রাপারের বাসিন্দারা জানান, মজবুত বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙতে ভাঙতে আমাদের যা ছিল সবই নদীতে গেছে। পায়রা নদীর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। এখন বেড়িবাঁধের যে অবস্থা তা বৃষ্টি এলে জোয়ারের পানিতে নিয়ে যাবে। তখন মাথা গোঁজার মতো ঠাই টুকুও থাকবে না।
তারা আরো জানান, প্রতি বছর শুনি ব্লকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ হবে কিন্তু বাস্তবে হয় না। একটাই দাবি ত্রাণ নয় আমরা ব্লকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: রুমান হোসেন বলেন, ‘এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙাচোরা ও দূর্বল অবস্থা। বড় ধরনের কোনো বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস হলে নদী তীরবর্তী মানুষগুলো দুভোর্গে পড়বে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, যাতে এই বাঁধগুলো শক্ত করে তৈরি করা হয়।’
মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান (লাভলু) বলেন, ‘প্রতি বছরই পায়রা নদীর বাঁধ ভাঙছে। এতে কেউ না কেউ নিঃস্ব হচ্ছে। বর্তমানে রামপুর এলাকার যে কয়েক জায়গায় বাঁধ ধসে গেছে, নদীতে জোয়ার বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে।’
উপজেলার পিপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু সুজিৎ মজুমদার জানান, ‘পায়রা পাড়ের মানুষ খুব কষ্টে দিনযাপন করছে। এখানের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পিপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বেড়িঁবাঁধের ঢালে স্কুলটির কার্যক্রম কোনোভাবে চলছে। তবে বর্ষা মৌসুমে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। যেসব স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়, সেখানে মেরামত করা হয় কিন্তু স্থায়ীভাবে শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হলে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শক্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।’
উপজেলা চেয়ারম্যান খান মো: আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘নদী ভাঙনে উপজেলার অনেক মানুষই নিঃস্ব হয়েছে। বসতভিটাসহ ফসলি জমি হারিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফ হোসেন বলেন, ‘বর্ষা শুরুর আগেই ঝুকিপূর্ণ ও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। রিপোর্ট পেলেই আমরা যথাযথভাবে কাজ শুরু করবো।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা