গলাচিপার সু-স্বাদু মুগডাল যাচ্ছে জাপানে
- হারুন অর রশিদ, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
- ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩৪
বাংলাদেশের পরিবারগুলোর প্রতি দিনের খাদ্য তালিকায় ভাতের পরই ডালের স্থান। এ দেশের প্রায় সব রকমের ডালই চাষ করা হয়। এসবের মধ্যে মুগডাল অন্যতম। গলাচিপায় মাঠে মাঠে মুগডালের সমারহ। এটি খেতে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি চাষ করেও ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুগডালের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল জেলায় আবাদ বেশি হয়। গলাচিপায় উৎপাদিত ডাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় মুগডালের আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর, ফেলন (পেলেন ডাল) ডাল ৭৭০ হেক্টর ও খেসারী ডাল ৮৫০ হেক্টর। এ বছর ডালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজর ৫০০ হেক্টর। তবে তা ছাড়িয়ে গেছে। কম বেশি ডালের আবাদ করলেও চাষীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫০০-এর মতো। বর্তমান সরকার রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে গলাচিপা উপজেলার ৩ হাজার ৫০০ চাষীকে বিনামূল্যে জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে বীজ মুগডাল বারী-৬, ২০ কেজি করে ড্যাব ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের জন্য বপনের উত্তম সময় হচ্ছে পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ হতে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)। আষাঢ় মাসে (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই) অবিরাম বৃষ্টিতে মুগের ফল পচে যায়। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে (মধ্য মার্চ) বীজ বপন সম্পন্ন করতে পারলে আষাঢ় মাসের আগেই ফসল সংগ্রহ করা যায় এবং ফল পচনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়। তীব্র তাপদাহের কারণে কৃষক-কৃষাণীরা ডাল তোলার জন্য সূর্য উঠার আগ থেকেই ক্ষেতে কাজ শুরু করে। সূর্যের তাপের তীব্রতার কারণে ক্ষেত থেকে ডাল তোলা সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। এছাড়া গাছগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে মুগডাল সংগ্রহ করা হয়।
সরেজমিনে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আ: ছালাম মৃধা (৭৩) জানান, তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে মুগডাল আবাদ করেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে ট্রাক্টর বাবদ ২৭০০ টাকা, দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরি বাবদ ছয় দিনে ৪২০০ টাকা, সার বাবদ ৪৫০ টাকা, ওষুধ বাবদ ১২২০ টাকা ও বীজ বপন করতে ১০০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার উৎপাদিত ডাল হয়েছে দুই মণ। যার বাজার মূল্য ৮৪০০ টাকা। আরো কিছু ডাল ক্ষেতে হতে পারে।’
তিনি আরো জানান, ‘গলাচিপায় বর্তমানে প্রচণ্ড খরা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে গরমে ডালের শাখা-প্রশাখা বাড়েনি। পাতা মুচরিয়ে রয়েছে। ফলন এ বছর কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জমিতে উপযোগী পরিবেশ না পাওয়ায় ডালের উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে।’
গলাচিপা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের এখানে দেশী বা সোনা মুগ, বারি মুগ-০৬ এর চাষ হয়। বারি মুগ-৬ এর হেক্টর প্রতি ফলন ১ থেকে ১.৫ টন। বিগত তিন-চার বছর ধরে এই এলাকার মুগডাল গ্রামীন ইউগ্লোনা কোম্পানির মাধ্যামে জাপান রফতানি হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে মুগডালের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দেয়ায় ডালের আকার ছোট হচ্ছে, ডালের ছড়ার সংখ্যা কম হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার জানান, ‘তীব্র তাপদাহে কৃষকরা কিছুটা বিপাকে রয়েছে। তবে ক্ষেতে সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ফলন বাড়ার সুযোগ রয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা