১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নদীতে মিলছে না ইলিশ, জেলেপল্লীতে নেই ঈদ আনন্দ

নদীতে মিলছে না ইলিশ, জেলেপল্লীতে নেই ঈদ আনন্দ - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইলিশের ভরা মৌসুমেও হাসি নেই বরগুনার পাথরঘাটার জেলেদের মুখে। একদিকে বঙ্গোপসাগরসহ উকুলীয় নদী বিষখালী-বলেশ্বর নদীতে নেই ইলিশ, আরেক দিকে ডাঙায় এনজিওর ঋণের চাপ।

এ নিয়ে ঈদের আনন্দ সবার হৃদয়ে কড়া নাড়লেও জেলেদের রাজ্যের বিষাদ। নদ-নদীতে কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় ঋণের জালে বন্দী হয়ে আছে ঈদের আনন্দ। শিশুদের গায়ে নতুন জামা উঠবে কি না তা নিয়েই দুশ্চিন্তা। এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যয় বেড়েছে জেলেদের, এ কারনে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন তারা।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলায় মোট জেলে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার, এর মধ্যে সরকারি নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৬ হাজার ৮২০ জন। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতি মাসে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ১৬ হাজার ২২৮ জন পরিবারকে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। এ ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য গরু ও উপকরণ দেয়া হয়। গভীর সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রগামী জেলেদেরেকে প্রণোদনার চাল বিতরণ চলছে।

উপকূলীয় জেলে মনির, ইলিয়াস, বেল্লাল হোসেন, ছরোয়ার জানান, এক দিকে আবরোধ অন্য দিকে সাগরে নিম্নচাপ। এই দুয়ে মিলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। অবরোধে মাছ ধরতে পারি না আবার নিম্নচাপের মধ্যে সাগরে জীবনের ঝুকি নিয়ে মাছ শিকারে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। এরমধ্যে কিভাবে আমরা ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঈদ করব ভেবে পাচ্ছি না। আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে ইলিশ মাছ ধরে জিবিকা নির্বাহ করি মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই অন্য কাজ করতে চাইলে কেউ কাজ দিচ্ছে না। অশিক্ষিত হওয়ায় পেশার পরিবর্তন করতে পারছি না। আমাদের জালেতো ইলিশ ছাড়া অন্য কোনো প্রকার মাছ ধরা পরে না। আমরা এখন দাদনের জন্য ট্রলার মালিকের কাছে গেলেও তারাও তারিয়ে দেয়। এ বছরের ঈদ জেলেদের জন্য নয়।

মৎস্য আড়তদার, ট্রলার মালিক, পাইকার ও একাধিক বাসিন্দাদের মতে, সাগরে মাছের সাথে এখানকার বাসিন্দাদের একেবারে মিল থাকার কারণে এবার ঈদে তেমন আনন্দের প্রভাব পড়বে না। উপকূলবর্তী উপজেলা পাথরঘাটার শতকরা ৯০ ভাগই অর্থনৈতিক জোগান আসে মৎস্য ক্ষেত্র থেকে। এ কারণে এখন পর্যন্ত জেলেদের জালে মাছ না পড়ায় ঈদ বাজারেও তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় ইলিশের মৌসুম। কিন্তু এ বছর সেই শুরু থেকেই সাগর থেকে জেলেরা ইলিশ শুন্য হাতে ফিরে আসছেন। এবার ঈদকে সামনে রেখে ১০ থেকে ১২দিন আগেই সাগরে পাঠানো হয়েছে ট্রলার। ইতোমধ্যে যে ট্রলার এসেছে তার মধ্যে দুএকটি ট্রলারে মোটামুটি মাছ পেলেও অধিকাংশ ট্রলার বাজার সদয়ের খরচই উঠাতে পারবে না।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রোকনুজ্জামান খান বলেন, এ উপজেলার ৯০ হাজার মানুষ মৎস্য পেশার সাথে জরিত। এই জেলেদের জন্য সরকার নিধারিত অবরোধ গুলোতে চাল ভিতরণ করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময় রমজানের শেষ সময় আর এ কার্যক্রম চলছে। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমারা বিজিডি চাল ভিতরণ করছি এবং বর্তমানেও চলমান আছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো ভিতরণ করা শেষ হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমাড় আপু জানান, ঈদকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত আমাদের সরকারি কোনো নিদের্শনা আসেনি। তবে বর্তমান সময়ে জেলেদের জাটকা আহরণ বন্দ থাকার সময়ের চাল প্রত্যেক জেলেকে ৮০ কেজি করে দেয়া হচ্ছে। এটি ২ ধাপে চলবে। এ উপজেলায় মোট জেলে রয়েছে ১৬ হাজার ৮২০ জন। এর মধ্যে থেকে ১৬ হাজার ২২৮ জন জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement