‘বিগত জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করা হবে’
- বরিশাল ব্যুরো
- ০৮ জুন ২০২৩, ২১:৩২
বরিশালকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত উন্নত এবং নিরাপদ নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ১৭ দফা ইশতেহার দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বেলা ১১টায় নগরের বান্দরোডস্থ সাউথকিং চাইনিজ রেস্তোরাঁয় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
এ সময় বরিশাল সিটির মেয়র নির্বাচিত হলে নিজে খাদেম হয়ে নগরীর সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে ১৭ দফা ইশতেহারের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথাও জানান হাতপাখা প্রতীকের এ প্রার্থী।
ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী বহু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী বরিশাল শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মোঘল আমলে এ শহর গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়া বরিশাল নগরী আজও অবহেলিত এবং বঞ্চিত।
তিনি বলেন, কাউকে ভোট দেয়া কোনো আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়; বরং এটি একটি নৈতিক বিষয়। তাই বুঝে-শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। ভোট পাওয়ার যোগ্য তিনিই, যার দ্বারা দুর্নীতি হবে না, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না, সমাজে জুলুম ছড়িয়ে পড়বে না, মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না। মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। দল-মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এমন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের একান্ত কর্তব্য।
মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম দৃঢ় অঙ্গীকার করে বলেন, নির্বাচিত হলে নির্বাচনী ১৭ দফা ইশতেহারের প্রতিটি বাস্তবায়ন করবেন।
ফয়জুল করীমের ১৭ দফা হলো-নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ভিক্ষুকদের অসহায়ত্ব দূরীকরণ ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ অনাহারে থাকবে না।
নগরবাসীর জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স ও সব ধরনের লাইসেন্স ফি সহনশীল পর্যায়ে আনা হবে। স্বল্প খরচে কোনো প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই নতুন ভবনের পরিকল্পনা ও নকশা পাস করা হবে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা সহজ করা হবে। হকারদের জন্য স্বতন্ত্র হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
নগরীতে টেকসই ও উন্নত রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হবে। নদী ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। শহরের সবুজায়ন ও শোভা বর্ধন করতে বিশেষ প্রকল্প নেয়া হবে। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য আধুনিক মানের ড্রেন নির্মাণ ও খাল খনন করা হবে। পরিকল্পিত ইউটিলিটি টানেল ও সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। স্লুইসগেট ও পানি নিষ্কাশন পাম্পের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে।
নগরীর জনবহুল এলাকায় পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথকভাবে আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। নগরীর বর্ধিত এলাকার রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎসহ সব নাগরিক সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে। ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নগরীর প্রতিটি রাস্তায় সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য ফুটপাতগুলো প্রশস্ত করা হবে। নগরীর যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল বসানো হবে। মোড়গুলোতে আইল্যান্ড ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে বছরের শুরুতে নগরীর সাথে সম্পৃক্ত সব সংস্থার সাথে সমন্বয় সভা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও সদর হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অসহায়, গরীব ও ছিন্নমূল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। গরিব মহিলাদের গর্ভকালীন চিকিৎসা ফ্রি করা হবে। বরিশাল নগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পরিমিত পরিসরে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হবে।
সিটি করপোরেশনে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা চালু করা হবে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হবে। নগরীর বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষে কম্পিউটার, আউটসোর্সিং ও বহুমুখী কারিগরী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিছন্নতাকর্মীর মাধ্যমে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি এলাকায় ঢাকনাসহ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতি দিন সূর্যোদয়ের আগেই সব ধরনের বর্জ্য নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণ করা হবে। নগরীর ধুলাবালি দূরীকরণ ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে। ক্ষতিকারক কীট ও মশা নিধনের লক্ষে পরিবেশবিদদের পরামর্শে মহল্লাভিত্তিক মশক ও কীট নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
নগরীর পিছিয়ে পড়া গরীব, ছিন্নমূল ও বস্তিবাসীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ সব সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার লক্ষে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হবে। গুচ্ছগ্রামগুলো (বস্তি) চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত করা হবে। গুচ্ছগ্রামবাসীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বরিশালকে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার ও সিন্ডিকেটমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে।
মানবিক কারণে পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেল চালিত থ্রি হুইলারের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র দেয়া হবে।
বেকারত্ব দূরীকরণে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষে নগরীতে শিল্প-বাণিজ্য খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। বিদেশগামী জনশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া ও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা কার্যকরে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিটিকরপোরেশনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব চাকরিজীবীদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের চাকরি পুনর্বহাল করা হবে।
নারী নির্যাতন ও যৌতুক প্রথা উচ্ছেদে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। নারীদের পৃথক কর্মসংস্থানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা এবং সম্মান সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারীদের জন্য পৃথক মার্কেট গড়ে তোলা হবে। নারী অবমাননা ও ইভটিজিং প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহানগরের প্রধান সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় থানাগুলোর সাথে সিটি করপোরেশনের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ করে নগরবাসীর নিরাপত্তা জোরদার করা কবে।
দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী নয় এমন সব ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের সুযোগ দেয়া হবে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে।
সব ধর্মের মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি পরিষদ' গঠন করা হবে। রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির লক্ষে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়। বরং সব রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের পরামর্শক্রমে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা হবে।
দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। নগরীর ওলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ‘পরামর্শ পরিষদ’ গঠন করা হবে। বিগত দিনে যারা বরিশালের সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি ছিলেনম তাদেরকেও সাথে নিয়ে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করা হবে।