১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি - ছবি- সংগৃহীত

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, ‘কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’ বাবুই হাসিয়া কহে, ‘সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’ কবি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ এ কবিতাটি কম-বেশি সবারই জানা।

কবিতার মতোই এক সময় গ্রামের তালগাছ, খেজুরগাছ কিংবা নারিকেলগাছে বাবুই পাখির স্বাধীন বিচরণের জন্য নান্দনিক বাসা দেখা যেত। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বাবুই পাখির আবাস বেশি ছিল। ঝাকে ঝাকে বাবুই পাখি উড়ে যেত। আবার বাসায় বসে বাবুই পাখি কিচির মিচির শব্দ করতো। কিন্তু এমন দৃশ্য বর্তমানে বিরল। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে বাবুই পাখির জন্য। ফলে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী বাবুই পাখি।

অবশ্য এখনো উপকূলীয় জনপদে বাবুই পাখি মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে। বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঢালী গ্রামের একটি তালগাছে এদের শতাধিক দৃষ্টিনন্দন বাসা রয়েছে। যা দেখতে শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসী প্রতিদিনই ওই গাছের নিচে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রখর রোদের উজ্জ্বলতায় রাঙা প্রকৃতির মতো এরাও মেতে ওঠে প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাসে। 

অনেকে বলছেন, গ্রামবাংলায় দু-একটি তালগাছে এদের বাসা ও বিচরণ থাকলেও আগের মতো আর নেই। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও গ্রাম কিংবা শহরেও সড়কে পাশে তালগাছে এদের শৈল্পিক বাসা ও বিচরণ দেখা যেত। তালগাছ কমে যাওয়ায় এদের বিচরণও কমে গেছে।

শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে সাধারণত উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। শৈল্পিক এসব বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও এদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসাটি শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি, যা টেনেও ছেড়া অসম্ভব প্রায়।

বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, বিভিন্ন প্রজাতির পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেনু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে।

পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে। পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে বিভিন্নভাবে ভালোবাসা নিবেদন করে করে পুরুষ পাখিটি। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে ওই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে চার দিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। প্রেমিক বাবুই যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার খুঁজতে থাকে অন্য সঙ্গী। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে।

আউশ ও আমন ক্ষেতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। এভাবেই বাবুই পাখির জীবনচক্র আবর্তিত হয়।

বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির এক অপরূপে সৃষ্টি বাবুই পাখি। অথচ এক যুগ আগেও সর্বত্র চোখে পড়ত বাবুই পাখি। এখন আর সারিবদ্ধ তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। শোনা যায় না কিচির মিচির শব্দ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণে মানব বসতি বাড়ায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এ পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে।

বেতাগী পৌর শহরের পাখি প্রেমিক এরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘বাবুই পাখির বিচরণ ধরে রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।’

বেতাগী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘তালগাছ রোপন করলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এতে অতীতের মতো বাবুই পাখিও বাসা বাঁধবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
অনুশোচনা নেই আওয়ামী লীগে, যে অপেক্ষায় তারা রাতে মাঠে নামছে চিরচেনা ব্রাজিল, ভোরে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা কাঁঠালিয়ায় মোটরসাইকেলচাপায় গৃহবধূ নিহত, আহত ২ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়নি : মাহমুদুর রহমান সাবেক এমপি টিপুকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করল জনতা বিএলআরআইয়ের ভূমিকা হওয়া উচিত দেশীয় জাত সংরক্ষণ : ফরিদা আখতার কেউ যাতে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে : আসিফ নজরুল প্রশাসক নিয়োগ করে পোশাক কারখানায় সমস্যা সমাধান সম্ভব? খুলনায় পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট ৯টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন তিন দিনের মধ্যে এনআইডিকে ক্যাটাগরি করার নির্দেশ ইসির

সকল