১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েল

বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েল -

দেশের ঐতিহ্য বহনকারী জাতীয় পাখি দোয়েল এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় গাছের ডালে, বনে জঙ্গলে দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের আবর্তে চিরচেনা সেই পাখির দেখা মেলে না আর। পাখির কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখিশূন্য হতে চলছে। বনাঞ্চলের পরিবেশ দুষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অধিক ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সঙ্কট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

ভাণ্ডারিয়া পৌর শহরের শিক্ষক বশীর উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেত ভোর হয়েছে। কিন্তু এখন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে, এখন গাছ-গাছালিতে পাখির ডাক নেই।

সাংবাদিক মো: সামসুল ইসলাম আমিরুল বলেন, দোয়েল পাখির এখন আর দেখা মেলে না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না।

তাই পাখি প্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাচায় বন্দি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়। সৌখিন পাখি পালনকারী রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না, তাছাড়া পাখি শিকারীদের কারণে পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

কৃষক হাবিব হাওলাদার বলেন, জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পাখি মরে যাচ্ছে, আবার খাদ্য সঙ্কট ও আভাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। বেশি মুনাফার আশায় বনে শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচাতে জীবন রক্ষার্থে পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে অনেকের অভিযোগ।

এ বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বন কর্মকর্তা ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, শীত মওসুমে পাখি শিকারের কিছু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া অন্য সময় তেমন শিকার হয় না। তিনি আরো বলেন, বন্য প্রাণী ও পশু পাখি আভাসস্থলে সামান্য খাদ্যের সঙ্কট থাকলেও উপকূলের বন রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। বন রক্ষা হলে পশু-পাখি, বন্যপ্রাণীও রক্ষা হবে। এদিকে, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ, উপকূলের বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা মিলবে না বলে মনে করেছেন পরিবেশবাদীরা।


আরো সংবাদ



premium cement