কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী এরশাদ
- বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা
- ০৮ আগস্ট ২০২০, ২২:৩৬
শখের বসে কবুতর কিনেছিলেন বছর ৮ আগে। তার নিজ বাড়িতে শখ করে মাত্র ৪শ’ টাকায় একজোড়া কবুতর কিনে পালন করে এখন সফল কবুতর খামারি বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: সাইদুল ইসলাম এরশাদ (৩২)। প্রিয়শখ এখন লাভজনক ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
পৃথিবীর সব দেশেই দেখা যায় এ শান্তির প্রতীক কবুতর। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে কবুতর পালন করে অতি প্রাচীনকাল থেকে। জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি পারাবত। জনশ্রুতি রয়েছে প্রাচীনকালে গৃহপালিত কবুতর চিঠির আদান-প্রদান করতো। গৃহপালিত কবুতরের বৈজ্ঞানিক নাম Columba livia domestic. গৃহপালিত কবুতরের উদ্ভব বুনো কবুতর Columbia livia থেকে।
বাংলাদেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শষ্যক্ষেত কবুতর পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পৃথিবীতে ২০০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। পূর্বে এ পাখিটি শখ করে পালন করতো। এখন সেই শখ লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, বেতাগী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পুরাতন থানার সামনে সাইদুল ইসলাম এরশাদের বাড়ি। এরশার ও তার ছোট বোন খাদিজাকে রেখে শৈশবে তার মা বিলকিস বেগম মারা যান। এরপর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন দুলাল বিয়া করে পৃথক হয়ে যান। মাতৃবিয়োগ এবং পিতার পৃথকের কারণে এরশাদের পড়ালেখার মন থাকলেও সুযোগ হয়নি। এ সময় অতি দুঃখ কষ্টে অতিবাহিত হয় জীবন। ছোট বোন খাদিজার ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়া সকল খরচ মিটাতে হচ্ছে তারই। জীবন-জীবিকার টানে নেমে পড়ে শ্রমিকের কাজ থেকে শুরু বিভিন্ন কাজ কাজে। রুজি-রোজগারের জন্য যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই করেছেন।
বর্তমানে বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে একটি মোবাইল সার্ভিসিং, ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের লেনদেনের কাজ করছেন। ওই দোকানের বিপরীত পাশে একটি দোকান ঘর ভাড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করছেন এবং এতে লাভবানও হয়েছেন। এরশাদ জানান, ‘শখ করে কবুতর পালন করে এখন লাভজনক পেশা ও ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।’
জালালী, গিরিবাজ, শুয়াচন্দন, কালোদম, গিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর পালন করছেন। প্রত্যেক জাতের কবুতরের জন্য আলাদা আলাদা খাঁচা রয়েছে। একজোড়া জালালী কবুতর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং একজোড়া থেকে প্রতিমাসে ১ জোড়া ডিম ও বাচ্ছা পেয়ে থাকেন। গিরিবাজ একজোড়া কবুতরের দাম ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা। এ গিরিবাজ একজোড়া কবুতর ১৮ দিন পরপর ১ জোড়া বাচ্চা দেয়। এ কবুতর বদ্ধঘরে পালন করা যায় এবং পোষা কবুতর ছেড়ে দিয়ে হাত তালু দিলে উপরে উঠতে থাকে, যত হাতে তালু দিয়ে শব্দ করবে তত উপরে উঠবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত হাতের তালুর শব্দ শুনবে ততক্ষণ উড়তে থাকবে। এসব দৃশ্য অবলোকন করার মতো। শুয়াচন্দন বা ফেন্সি জাতের কবুতর দেখতে খুবই সুন্দর। এ জাতের কবুতর চন্দন বর্ণ এবং গলায় আকর্ষণীয় একজোড়া গোলাকার দাগ হয়ে থাকে। একজোড়া শুয়াচন্দনের দাম ১,২০০ থেকে ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি ২৫ দিনে একজোড়া শুয়াচন্দন থেকে একজোড়া বাচ্চা ও ডিম পাওয়া যায়।
কালোদম কবুতর গাঁ সাদা ও লেজ কালো। এটা দেখতে খুবই সুন্দর। ১ জোড়া কালোদম কবুতর প্রতিমাসে ১ জোড়া বাচ্চা দেয়। এ জাতের কবুতর ১ জোড়ার দাম ৩,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা। গিয়া বা সুন্নি জাতের কবুতর সাধারণত গিয়া বর্ণের হয়ে থাকে। এ জাতের কবুতরও প্রতিমাসে ১ জোড়া বাচ্চা দেয়। ১ জোড়া কবুতরের দাম ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
এরশাদের বিভিন্ন জাতের ১শ’র বেশি কবুতর রয়েছে। গম, চাল, ভুষি, ভুট্টা ভাংগা, সরিষা, ধান, চাল, ছোলা বুট, মটর ডালসহ পরিমিত পানি দিনে ২/৩ বার খাবার দিতে হয়। এতে প্রতিমাসে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার খরচ হয়।
তিনি বলেন, ‘কবুতরের বেশি খাবারেরও প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন ২/৩ বার খাবার ও পানি দিলেই হয়। তবে নিয়মিত এর বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিমাসে সকল খরচের পর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কবুতর বিক্রি করে আয় করেন।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা