ঝালকাঠিতে ইউপি চেয়ারম্যান হলেন যুবলীগ নেতা, পরিষদে তালা দিল বিক্ষোভকারীরা
- ঝালকাঠি প্রতিনিধি
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৩

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (দোলন মুন্সি)। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালতলা বাজারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্যানেল চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেয়ার দাবিতে মিছিল শেষে ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারী ইউনিয়নবাসী।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানরা পলাতক থাকায় ইউনিয়নের বাসিন্দারা লিখিতভাবে নিরপেক্ষ প্রশাসক চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। এর পর দু’দফা প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা চলছিল। তবে পতিত স্বৈরাচার সরকারের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম দোলন মুন্সী শুরু থেকেই তার ভাইদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করিয়ে ভুয়া প্যানেল রেজুলেশন করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। সেখান থেকে ইউনিয়নের প্রশাসকের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সাথে ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। পরে সেই মোতাবেক নিষ্পত্তি করা হয়।
এদিকে নিষ্পত্তি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেন এবং সেই মোতাবেক তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সোমবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করে ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন ইউনিয়নবাসী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ সময় মিছিলের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: শহিদ খান, সাধারণ সম্পাদক মো: সুলতান আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শহিদ হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো: মাইনুল ইসলাম বাবুল, যুবদল নেতা শহিদ তালুকদার, লিটন মোল্লা ও ছাত্রদল সভাপতি সজল তালুকদার প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- যুবদল নেতা নান্নু তালুকদার, আলমগীর হোসেন, সাইফুল খান, তরিকুল ইসলাম মিঠু, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুমন তালুকদার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: ইমরান সরদার হিরু, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর খান, শ্রমিকদল সাধারণ সম্পাদক বাবুল ফরাজি ও মিজান তালুকদার প্রমুখ।
মিছিলে বক্তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর কাউকে ইউনিয়নের দায়িত্বে দেখতে চাই না। আমরা সুবিদপুর ইউনিয়নে পুনরায় প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানাই। প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য। পতিত স্বৈরাচার সরকারের কোনো দোসর বিনা ভোটে নির্বাচিত কোনো ভোট ডাকাত এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। ভবিষ্যতে আরো বড় কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করেন, প্রশাসনিক পদে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের বসানো হলে ইউনিয়নের সুষ্ঠু উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তার ভাইয়েরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ায় তাদের ছত্রছায়ায় তিনি বুক ফুলিয়ে স্বৈরাচার সরকারের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।
এদিকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জাহিদুল। এছাড়া সেখানে প্রায় ২০০ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে দাওয়াত দিয়ে চিঠিও দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা বলেন, ‘পতিত সরকারের দোসরদের একত্রিত করে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে। অন্যথায় কিভাবে তিনি পরিষদের সচিবের মাধ্যমে এবং নিজে এই দাওয়াত দেন?’
এদিকে দুপুরে বিএনপি মিছিল করলেও বিকেলে দোলন মুন্সী তার আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় দ্বিতীয় দফায় বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় বলে জানা যায়। পরে প্রতিবাদ মিছিল চলাকালে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন সাধারণ জনগণের তোপের মুখে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, সচিব রুহুল আমিন প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগপন্থী দোসরদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন এবং তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিটিং করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে বিক্ষোভ শেষে ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এছাড়া ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: শহিদ খান বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল দোলন মুন্সী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দিয়ে সংবর্ধনার নামে গোপন মিটিং করার পরিকল্পনা করছে। সে জন্য আমরা স্বৈরাচার সরকারের দোসরকে প্রতিহত করছি। পতিত স্বৈরাচার সরকারের যুবলীগ নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা ইউনিয়নবাসী মানি না, মানতে পারি না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। উপর মহলের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা