২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বরিশাল বিভাগের শহীদ ৭৯ পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান

আর কোনো ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসতে দেয়া হবে না : সমন্বয়ক সারজিস

বরিশাল বিভাগের শহীদ ৭৯ জনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেন সরজিস আলমসহ অতিথিরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

আর কোনো ফ্যাসিস্টকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে দেয়া হবে না জানিয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের কথা না বলে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, যারা এসব বলেন, তারাও ফ্যাসিস্টদের দোসর।’

তিনি বলেন, ‘যে শিশু জন্ম নেয়ার আগেই বাবাকে হারাল, তাকে আমরা কী জবাব দেবো? আমার অনেক বোন বিয়ে হওয়ার কয়েক দিন পর স্বামী হারিয়েছেন। তাদের সারাজীবন কিভাবে কাটবে?’

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগের শহীদ ৭৯ জনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।

সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সহজে সব ভুলে যাই, ১৬ বছরের অত্যাচার ভুলে যাই, গুম, খুন, হত্যা ভুলে যাই। কিন্তু এ দেশের ছাত্রসমাজ এবার আর ভুল করবে না। আমরা সব হত্যার বিচার নিয়েই ঘরে ফিরবো।’

‘খুনি হাসিনা সারাজীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিলেন’ উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, ‘যেখানে গেছেন, সেখানেই তার পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এদেরকে খুন করার সময় তার বুকটা একটুও কাঁপেনি।’

সারজিস আলম বলেন, ‘আজ থেকে ৫০ বছর আগের গল্প বলে শেখ সহাসিনা ক্ষমতাকে সব সময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন। তিনি দুই হাজার মানুষকে কিভাবে খুন করলেন? যার চলে গেছে, সে-ই বোঝে। আমরা অনেক কিছু করতে পারি, অর্থ সহযোগিতা করতে পারি, চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি, সম্মানী ভাতা দিতে পারি, কিন্তু চিরতরে হারিয়ে যাওয়া ওই মানুষটাকে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এই ক্ষত কোনোদিনও পূরণ করা সম্ভব না।’

তিনি আরো বলেন, “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে আমরা পাঁচ লাখ টাকা করে চেক দিচ্ছি। এটা মাত্র শুরু, কেউ যেন মনে না করেন এটাই শেষ। তাদের যত দিন যা কিছু প্রয়োজন, সেই যৌক্তিক চাহিদা পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সেটা শুধু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে নয়, সেটা শহীদ পরিবারের একজনকে চাকরি দিয়ে হোক, তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে হোক কিংবা সম্মানীর ব্যবস্থা করে হোক। এক কথায়, দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।”

এর আগে তিনটি বিভাগে এই অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ বিভাগ হিসেবে তারা বরিশালে এসেছেন।

‘এই সহায়তা নিছক অর্থ নয়, এটা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। আমাদের প্রত্যেক শহীদ পরিবারের বাড়িতে যাওয়া উচিত। তবে সেটা করতে অনেক সময় প্রয়োজন হওয়ায় আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা তাদের কাছে যাবো, তাদের পাশে থাকবো,’ বলেন সারজিস।

অনুষ্ঠানে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, বরিশালের সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুদানের চেক হাতে, চোখে পানি...
এদিকে, চেক হাতে পেয়ে শহীদ পরিবারের অনেককে কাঁদতে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীরা এগিয়ে গেলে অনেকেই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেননি, শুধু চোখের পানি ছেড়েছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আমার সন্তান কোথায় পাবো?’ তাদের মধ্যে একজন আবদুল্লাহ আল আবিরের মা। তার বাসা বরিশাল নগরীর গোড়াচাঁদ দাস রোডে।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে সক্রিয় ছিল আমার ছেলে আবির। ১৯ জুলাই সে গুলিবিদ্ধ হয়। আমি কাছে ছিলাম না। আমার আরেক মেয়ে ওর কাছে ছিল। সারারাত রক্তক্ষরণ হয়, কিডনিতে আঘাত লেগেছিল। আমার কষ্ট একটাই যে আমার সন্তান এতবড় ধরনের বিপদে পড়েছে তা-ও ঠিকমত জানতে পারিনি। খুব খারাপ অবস্থা ছিল, তখন নেট বন্ধ ছিল। আমি কিভাবে ভুলে থাকবো? আমার তো আর কোনো ছেলে নেই!’


আরো সংবাদ



premium cement