মুলাদীতে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ৪টি গ্রামসহ শতশত ঘরবাড়ি
- ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬
বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার চরমালিয়া, কায়েতমারা, সফিপুর ও চরমালিয়াসহ চারটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে। চরকালেখা ইউনিয়নে চরমালিয়া গ্রামের বেপারীর হাটসহ শতশত ঘর-বাড়ি জয়ন্তী নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চরমালিয়া গ্রামটি। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রাস্তা-ঘাট নদীতে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বেপারীর হাট ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই গড়ে উঠে শতশত দোকান-পাট। যার ওপর নির্ভর করে শতশত পরিবারের জীবিকা নির্বাহ। পুরো বাজারটি নদীতে বিলীন হতে মাত্র কয়েক হাত বাকি। বাজারের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বাজারটি ঘেষে রয়েছে মুলাদী-সফিপুর সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতি দিন হাজার মানুষ, শতশত গাড়ি চলাচল করে। সড়কটি নদীতে বিলীন হলে মুলাদী সদরের সাথে উত্তরাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা মুলাদী সরকারি কলেজ, চরকালেখান আদর্শ কলেজ, চরকালেখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসার শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও হাজার হাজার জনগণ পড়বে ভয়াবহ ভোগান্তিতে।
এই রাক্ষসী জয়ন্তী নদীটি প্রায় দুই শ’ বছর পর্যন্ত মুলাদীবাসীকে দূর্গতি, ধ্বংস ও দারিদ্র্যতার সাথে জড়িয়ে রেখেছে। মুলাদী উপজেলার বহু প্রাচীন ঐতিহ্য, স্থাপনা, বন্দর, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জয়ন্তী নদীতে গ্রাস করে নিয়েছে।
এলাকার প্রবীনদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঐতিহাসিক মীরকুতুবশার দিঘি, বাইশ কাইনী জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দেয়াল ঘেরা বোয়ালিয়ার জমিদার গ্যানদা প্রাসাদ সেনের বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, মঠ কারিকর পল্লী, কুমার পল্লী দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সবেই এই নদীতে বিলীন হয়েছে।
খ্রিস্টপূর্ব পনেরো শতাব্দীতে জেগে ওঠা এই মুলাদীতে (মূলদ্বীপ) কোনো প্রাচীন ঐতিহ্য নেই। নদীতে ভেঙে সবেই চরঅঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এমনও পরিবার রয়েছে যারা জয়ন্তী নদীর এপার-ওপার ১০ থেকে ১২ বার ঘর বেঁধেছে।
বেপারীরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ডা: এবিএম বজলুর রহমান বলেন, ‘জয়ন্তী নদীর কড়াল গ্রাসে এলাকার শতশত ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন যদি রোধ না করা যায় তা হলে বিভিন্ন বাজার ও সড়ক নদীগর্ভে চলে যাবে। মানবতার জীবন কাটাবে শতশত পরিবার।
এদিকে, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরমালিয়া, কায়েতমারা, সফিপুর ও চরমালিয়াসহ চারটি গ্রাম। ইতোমধ্যে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। চার গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আজ ঢাকা শহরের বস্তীবাসী হয়েছে।
নদী ভাঙ্গনী মানুষ আজ রাস্তায় পাশে ঘর বানিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এলাকাবাসীর দুঃখ কোনো রাজনীতিবিদ তাদের দেখতে যায়নি। যে এলাকার সচিব, উপ-সচিব ও ডিসি থাকা সত্ত্বেও তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি।
চরকালেখা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রাশেদ বেপারী বলেন, ‘মুলাদী উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে জনববহুল এলাকা হলো চরকালেখা ইউনিয়ন। এ এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে জয়ন্তী নদী। এ নদী ভাঙ্গনে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে কয়েক হাজার পরিবার। হাজার হাজার মেধাবীর স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।’
বাজার ও সড়কটি রক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা