ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে গত শনিবার (১৯ জুলাই) প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির এই সমাবেশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি।
এর আগে, ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াতে ইসলামী। এর দীর্ঘ ১০ বছর পর ২৩ সালের ১০ জুন রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলায়তনে সমাবেশ করে দলটি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা এবং লগি-বৈঠা দিয়ে নৃসংশভাবে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলের আরামবাগে সমাবেশ করে দলটি।
'২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মৌলিক সংস্কার আনা, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ১৯ জুলাই ১০ লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতের মাধ্যমে বিশাল সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বিএনপির দীর্ঘদিনের জোট ছিল জামায়াত। যুগপৎ আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। দলটি আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা করছে। এটিকে গণতান্ত্রিকভাবে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য, রাজনীতিতে সামনে আরো নানা সমীকরণ হবে। জামায়াত তাদের মতো করে জোট করতেই পারে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। এটা দেশ ও রাজনীতির জন্য ভালো। সংসদে শক্তিশালী সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রয়োজন রয়েছে। শক্তিশালী পক্ষের মধ্যে ভোটের লড়াই হলে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হবে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। এতে প্রমাণিত হয় যে, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬-১৭ বছরে দুঃশাসন করেছে, সেই অপশাসন থেকে বের হয়ে আসার এটা একটা প্রতীক। বিএনপি উদারতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আগামীতেও এই রাজনীতি করবে বিএনপি।
'জামায়াত আমিরের অসুস্থতার খবরে তাৎক্ষণিক মির্জা ফখরুল হাসপাতালে ছুটে যাওয়াকে রাজনীতির অঙ্গনে উদার বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির এই উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন' নেটিজেনরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জামায়াত সমাবেশ করেছে। রাজনৈতিক দল তারা সমাবেশ করছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে সে বিষয়টি দেখা না দেখার কি আছে? করতেই পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। গণতন্ত্রে একটা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি দেখা তেমন কোনো ব্যাপার না। একটি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি গণতন্ত্রের জন্য খুবই পজিটিভ (ইতিবাচক) ।
রাজনৈতিক মেরুকরণের আভাস পাচ্ছেন কি? তিনি বলেন, আভাস তো অনেক দিক থেকে অনেকভাবেই আসে। সমাবেশকে চিন্তা করা যায় না। সব আভাস আবার এক হয় না, দেখি না আমরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজনৈতিক মেরুকরণের আভাস পাচ্ছি না। এক কথায় বলি, একটি সংগঠনের সমাবেশ করার অধিকার আছে। গণতন্ত্রে এটা সবার জন্য স্বীকৃত। সবার বলতে যারা রাষ্ট্রের নীতিবদ্ধ আইন সঙ্গত রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ করেছে এটা আমি ইতিবাচক অর্থেই দেখি। গণতন্ত্রে সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। সে অধিকারটাই জামায়াত প্রয়োগ করেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে একটা ভালো সমাবেশ করেছে। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসূচি আগামী দিনে ভালো কিছু দেখছি। রাজনৈতিক দল সমাবেশ করে তাদের শক্তি সামর্থ্য এবং কর্মসূচি প্রকাশের গুরুত্ব দিয়ে, সেটি তারা করেছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে স্বাভাবিক কারণে নির্বাচন মুখে একটা মেরুকরণ তৈরি হবে। তবে এখনো সেই মেরুকরণটা স্পষ্ট না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, গণতন্ত্রের যদি ভিন্ন মত না থাকে, অন্য পরামর্শ না থাকে, তাহলে দেখা যায় সবসময় একটা এক নায়কতন্ত্র বা একতরফা জিনিস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একতরফা জিনিষে গণতন্ত্রের বিপক্ষ শক্তি প্রবেশ করার সুযোগ পায়। সেই দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীর এই উদ্যোগ একটা শক্তিশালী বিরোধী ফ্রন্ট গঠন করতে পারে। আর নির্বাচনের মধ্যের ফলাফলের দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে থাকে তাহলে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল প্রতিষ্ঠিত হবে অথবা তারা ক্ষমতায় যাবে, যেটাই হোক। সেখানে হয়তো বিএনপি বিরোধী দল থাকবে।
আবার বিএনপি যদি নির্বাচনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় এই শক্তিশালী বিরোধী দল পদে পদে ভুল ধরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে নিয়মিত একটা চাপে রাখবে। আর গণতন্ত্র বিকশিত হবে। জামায়াতের সমাবেশটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।
লাখো জনতাকে সাথে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী থেকে যারা আগামীতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী আগামীতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বে না। কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী তার নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না।
কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী যদি তার নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন। চাঁদা আমরা নিব না দুর্নীতি আমরা করবো না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের আমিরের ঘোষণা তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি আশা জাগিয়েছে। নেটিজেনরা তাদের ফেসবুকে বিষয়টি পোস্টে প্রত্যাশার স্ট্যাটাস লিখেছেন।
জামায়াতে আমির বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে, শাপলা গণহত্যা, সারাদেশের গণহত্যা, ২৪ এর গণহত্যা যারা করেছে তাদের সবার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত পুরানো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।