ড. আলী রীয়াজ

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন

‘আশা করছি, বাকি দিনগুলোর সংলাপে আরো কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।’

অনলাইন প্রতিবেদক
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. আলী রীয়াজ
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. আলী রীয়াজ |নয়া দিগন্ত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার ব্যবস্থাটি বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

রোববার (২০ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যেই জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ করছে। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে দিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করছি, বাকি দিনগুলোর সংলাপে আরো কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সমস্ত রাজনৈতিক দলই এই ব্যাপারে একমত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন উপ-অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে এবং সংশোধিত ভাষ্য হবে, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান, যা পঞ্চদশ সংশোধননীর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার ব্যবস্থাটি ছিল সেটা বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আজ অধিকাংশ সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টাই আলোচিত হয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রস্তাব ছিল। আমরা সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী চারটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছিলাম। তারা হলো-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনপি, এনসিপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।’

তিনি বলেন, ‘চার দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে কমিশন সকালে একটি সংশোধিত প্রস্তাব হাজির করে। অধিকাংশ দল মনে করেছে, এই সংশোধিত প্রস্তাবের মধ্যে গত কয়েক দিনের আলোচনার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে। একইসাথে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেগুলোকে সমন্বিত করা সম্ভব হয়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রকম আলোচনার মধ্য দিয়ে কিছু সংশোধন সংযোজনের প্রশ্নটা উঠে এবং সেই লক্ষ্যেই সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন দিনের মাঝামাঝি সময়ের বৈঠক করেছে। বৈঠক করে আরেকটি সংশোধিত সমন্বিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এ প্রস্তাবটিতে বিস্তারিতভাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রস্তাবের একটি লিখিত ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ওই লিখিত প্রস্তাব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা ওই খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে দলগতভাবে আলোচনা করে সোমবার (২১ জুলাই) আমাদেরকে মতামত জানাবেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আমরা এ বিষয়ে আমাদের কমিশনের অবস্থান বা একমত হওয়ার জায়গাটা বলতে পারব।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘উচ্চকক্ষের বিষয়ে একাধিক দিন আলোচনা হয়েছে। উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে কোনো ভিন্ন মত নেই। তবে কিভাবে হবে সে বিষয়ে দু’টি মত আছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের কাছে এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কমিশন ইতোমধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা করেছে।’