চুরির অপবাদ দিয়ে শ্রমিককে নির্যাতন, লজ্জায় অত্মহত্যা

‘আমি মোবাইল চুরি করেনি। আমাকে শুধু শুধু মারধর করা হয়েছে। আমার জন্য আমার মামা-মামী অপমান হয়েছে।’

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা

Location :

Araihazar
আড়াইহাজার থানা
আড়াইহাজার থানা |নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মোবাইল চুরির অপবাদ নিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া মো: শাহীন (২১) নামের এক শ্রমিক ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন।

সোমবার দুপুরে শাহীনের মামা ইদ্রিস আলী সাতজনের নামের একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে, শনিবার ভোরে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ব্রাক্ষন্দী ষাড়পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মো: শাহীন ওই গ্রামের মরহুম মো: নাঈমের ছেলে। শাহিন আসামিদের মালিহা ফুড প্রোডাক্ট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

জানা গেছে, মা ছোটবেলায় মারা যাওয়ার পর থেকে শাহীন একই গ্রাম তার মামা বাড়িতে থাকতেন। সেখানে তিনি একই গ্রামের নুরু মিয়ার মালিহা ফুড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ঘটনার আগের দিন নুরু মিয়ার ছেলে মো: মঞ্জুরুলের একটি মোবাইল হারিয়ে গেলে শাহীনকে মোবাইলটি চুরির অপবাদ দেয় তারা। এবং ওই দিন রাত ৯টার দিকে শাহীনের বাড়িতে গিয়ে মঞ্জুরুল (৪২), পোয়া মিয়ার ছেলে মহিবুর (৪০), ইজুকারীর ছেলে মঞ্জুর হোসেন (৪১), মরহুম হানিফ কারীর ছেলে নুরু মিয়া (৬০), নুরু মিয়ার ছেলে মোশারফ (৩৫), মরহুম সাজুর ছেলে রিপন (৪০) ও ফয়জুদ্দিনের ছেলে আনার (৪০)-সহ আরো কয়েকজন তাকে এলোপাথাড়ি মারধর করেন। ওই সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শাহিন। পরে মোবাইল ফেরত না দিলে মেরে ঝুলিয়ে রাখবে বলে হুমকি দিয়ে করে তারা চলে যান।

আরো জানা গেছে, ঘটনার পর শাহীনের মামা কাজ থেকে বাসায় ফিরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করে শাহীনের থেকে সব ঘটনা জানতে পারে তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে শাহীন একটি অডিও রেকর্ডে বলে যান, ‘আমি মোবাইল চুরি করেনি। আমাকে শুধু শুধু মারধর করা হয়েছে। আমার জন্য আমার মামা-মামী অপমান হয়েছে। আমি এই জীবন রাখব না।’ শাহীন লজ্জার ভয়ে ভোরে নিজ ঘরের বাঁশের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেন। সকাল ৬টায় তার মামা কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতর ঢুকে শাহীনের লাশ ঝুঁলতে দেখেন। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠান।

আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার নাছির উদ্দিন জানান, থানায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।