ব্রিতে পদোন্নতি নিয়ে তীব্র বিভাজন : স্থবির গবেষণায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যস্ত মহাপরিচালক

পিএসও পদে পদোন্নতির তালিকা ঘিরে বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে। এতে দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর

Location :

Gazipur
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) অভ্যন্তরে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পিএসও) পদে পদোন্নতির তালিকা ঘিরে বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে। এতে দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল আড়াইটায় ব্রি’র মহাপরিচালকের সভাকক্ষে ‘নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি-১ (ডিপিসি) এর সভা বসার কথা রয়েছে। সেখানে সাতজন কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব আলোচনায় আসবে। তবে তালিকাভুক্তদের অনেকেই পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত—এমন অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তারা এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগও দাখিল করেছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান গবেষক।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ ১২-১৩ বছর ধরে সিনিয়র হয়েও আমরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। অথচ রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এতে ব্রি’র গবেষণার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

অন্যদিকে বিএনপি ঘরানার বলে পরিচিত এক কর্মকর্তা—ড. হাবিবুর রহমানকে (মুকুল) ঘিরে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

প্রশাসনের সূত্রমতে, তিনি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে মাসিক চাঁদা তোলার অভিযোগে তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির তালিকায় নাম পেয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, ড. মুকুল অল্প কিছু শ্রমিককে নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। ফলে অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এর আগে চলতি মাসের ৬ অক্টোবর ব্রি’র বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: শহিদুল ইসলাম ও শ্রমিক আনোয়ার হোসেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও প্রতিষ্ঠানজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। ওই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করলেও পক্ষ-বিপক্ষের টানাপোড়েন এখনো কমেনি।

ব্রি’র ভেতরে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা বলছেন, বর্তমানে গবেষণার চেয়ে পদোন্নতি ও প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে মনোবল হারাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ল্যাব কার্যক্রমও প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

তবে মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘যারা পদোন্নতি নিয়ে আপত্তি তুলছেন, তারা চাইলে সরাসরি আমার সাথে আলোচনা করতে পারেন। আমি কাউকে জোর করে প্রমোশন দিতে চাই না। এখানে দল-মত নয়, যোগ্যতা ও শৃঙ্খলাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’

তার এ বক্তব্যে অনেক কর্মকর্তা আশাবাদী হয়েছেন। তাদের মতে, মহাপরিচালক যদি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখেন তাহলে ব্রি আবারো তার গবেষণাভিত্তিক ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আসন্ন পদোন্নতি সভাকে ঘিরে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে। প্রশাসন, বিজ্ঞানী ও শ্রমিকদের মধ্যে অবিশ্বাস এখন চরম পর্যায়ে, যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, ‘ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসন না ফিরলে ব্রি তার অর্জনের বড় অংশ হারাবে। গবেষণা এখন টানাপোড়েনের বলি।’

সবশেষে ব্রি’র কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করছেন—প্রতিষ্ঠানটি যেন আবারো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকৃত গবেষণার পরিবেশে ফিরে আসে। যেখানে ধানের প্রতিটি নতুন জাতের পেছনে থাকবে বিজ্ঞান ও সততার সম্মিলন।