মহাসড়ক ও জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন খুঁটি ঝুঁকিতে
কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙন- কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পদ্মার ভয়াল ভাঙনের মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। শত শত বিঘা ফসলি মাঠ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন থেকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে প্রায় তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়েছেন তারা।
গত রোববার বৃষ্টিতে ভিজে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ঘেরাও করে স্মারকলিপি দিয়েছে। একইভাবে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের শত শত বিঘা ফসলি মাঠ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমাদের বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের ঘরের কাছে চলে এসেছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘরবাড়ি নদীতে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় সড়ক অবরোধ ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। নদীভাঙন সমস্যার সমাধান না হলে এই অবরোধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তারা আরো বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়িয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়িয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশ কিছু এলাকা। বিগত তিন বছর ধরে নদীতে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাড়ি, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে আছে। কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে এক হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি বাপাউবো। দ্রুত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার ও ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছাড়েন। আটকে থাকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, সাহেবনগর বেড়িবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রুত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০০ মিটার গ্রোয়েন (বাঁধ) নদীর মধ্যে আছে। সেখানে পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপর পাড়ে ভাঙছে।
পদ্মা নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মেহেদী হাসান অপু জানান, মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া, তালবাড়িয়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগর, নওদা খাদিমপুর, বাহিরচর, সাহেব নগর, ঘোড়ামারা, রানাখড়িয়া গ্রামের হাজার হাজার একর আবাদি জমির ফসল নদীতে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ছয়টি টাওয়ার (খুঁটি) সহ গ্রামের স্কুল কলেজ, মাদাসা, মসজিদ, গোরস্থান, এবং দেশের উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গেও যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো জানান, বিদ্যুৎ টাওয়ার নদীর ১০ মিটারের মধ্যে আর মহাসড়ক মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে রয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নদী আগ্রাসী হয়ে উঠায় এলাকাবাসী নির্ঘুম সর্বদা ভয় ও আতঙ্কে দিনপাত করছে।
যুগ্ম আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম হায়দার জানান, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নদীর পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর নদী ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। তিনি জানান, একটি মহল এই বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় পূর্বের টেন্ডার বাতিলের চেষ্টা করছে যা আত্মঘাতী এবং এটা এলাকাবাসী কখনো মেনে নেবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা