১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ছেলের শোক ভুলতে ছাত্রদের মিছিলে যান শহীদ মাহফুজের বাবা

শহীদ মাহফুজুর রহমান -

‘মাহফুজ আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। আগের রাতে বলেছিল তোমরা দেখ আবু সাইদকে কিভাবে পাখির মতো গুলি করে মারল। আমার ভালো লাগে না। আমিও মিছিলে যাব। আমি সাবধানেই থাকব। তোমরা এত ভাবো কেন?’ মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য ১৮ জুলাই রাতে খাবার সময় কথাগুলো বলেছিলেন মাহফুজুর রহমান (১৭)। পরদিন ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় জুমার নামাজ শেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে নেমে মাহফুজ গুলিবিদ্ধ হলে মারা যায়। সে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাইনতলা গ্রামের আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে।
মাহফুজের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯ জুলাই মাহফুজ গুলিবিদ্ধ হয়। ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তার লাশ খুঁজে পাই। কানের নিচ থেকে গুলি এপাশ-ওপাশ ভেদ করে চলে গেছে। পোস্টমর্টেম করাতে কমপক্ষে সাত দিন লাগবে- হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য দেয়ায় ওই দিনই পোস্ট মর্টেম ছাড়া লাশ নিয়ে বাইনতলা গ্রামে পৌঁছান আব্দুল মান্নান। কোনোমতে জানাজা নামাজ সেরে পারিবারিক কবরস্থানে মাহফুজের লাশ দাফন করা হয়। দাফনের পর পরেই বাড়িতে পুলিশের হানা। গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বরগুনায় চলে যান মান্নান হাওলাদার।
একমাত্র ছেলের শোক সামলাতে ছাত্রদের মিছিলে সময় দেন আব্দুল মান্নান। মিছিল দেখলে আর মনে কষ্ট থাকে না। মিছিলে যোগ দিয়ে কষ্ট ভোলার সুযোগটাও পেয়েছেন গত ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগের আগে তিনি নিহত ছেলের জন্য চিৎকার করে কাঁদতেও পারেননি। পুলিশের তাড়া খেয়ে বাড়ি ছেড়ে বরগুনায় আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পরে আব্দুল মান্নান বাড়ি ফেরেন।

মাহফুজের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার। কিন্তু বুলেট সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে তার ও তার পরিবারের।
শোকাহত বাবা আব্দুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, সংসারের হাল ধরার মতো আমার আর কেউ রইল না। আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটাও কম পাওয়া নয়। আমার ছেলের নাম শহীদী তালিকায় থাকবে এটাই বড় পাওয়া। দেখা হবে জান্নাতে এটাই আশা। তার নামে মিছিল হবে। এতেই আমি গর্বিত। আমার রিজিক সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ঘরে গেলে ওর মা আমাকে প্রশ্ন করে মাহফুজ কোথায়? ওর বোনেরা কাঁদে ভাইয়ের জন্য। ওই সময় কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। তখন ভারী হয়ে ওঠে বুক।’
আব্দুল মান্নান ২০১০ সালে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকা চলে যান। তিন মেয়ের বিয়ে দেয়ার পরে স্ত্রী বেগম বিবি ও ছেলে মাহফুজকে নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বাসা ভাড়া থাকেন। আব্বাস উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল মাহফুজ। ছেলের রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে এটাই বড় পাওয়া তার বাবার।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইল কি হামাসকে ধ্বংস করতে পারে? রাঙ্গাবালীতে ভোক্তা ঠকানোর দায়ে ৯ জনকে অর্থদণ্ড ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক : অর্থ উপদেষ্টা ঢাবি ও জাবিতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাকুন্দিয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রীর মাকে মারধর সুশীলতার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে বিপ্লবের মূল্যবোধ বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগের আদেশ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন : ডা. জাহিদ মহাদেবপুরে স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড়ো : ইসরাইলকে জাতিসঙ্ঘ

সকল