১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

প্লাস্টিক পোড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়ায় সয়লাব শ্যামনগর

মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা
প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া আচ্ছন্ন সোয়ালিয়া স্কুলের আশপাশের এলাকা : নয়া দিগন্ত -


সাতক্ষীরার শ্যামনগর পৌর সদরের জনবসতিপূর্ণ সোয়ালিয়া এলাকায় দুই-তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা ও রাবার। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। এই বর্জ্য পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও তার গন্ধে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। ধোঁয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে আশপাশের কৃষি জমির ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামনগর পৌর সদরের সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সীমানা ঘেঁষে জ্বালানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা ও রাবার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সড়ক নির্মাণের সামগ্রী প্রস্তুত করতেই পোড়ানো হচ্ছে এসব প্লাস্টিকের জুতা ও রাবার। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের পাশে দুই-তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী এ কাজ। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন শ্যামনগর উপজেলার এলজিইডির বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জন্য সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সীমানার পাশের জায়গাটি বেছে নিয়েছে। এখানে জ্বালানি হিসেবে তুষ ও কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন জুতা, পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন রকমের ভাঙারি দ্রব্য। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা পরিবেশ, পরিস্থিতি, গাছপালা ও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকির কোনো তোয়াক্কা না করেই এসব অপদ্রব্য পুড়িয়ে যাচ্ছেন।

সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টির কাছেই রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানো হচ্ছে। আর এই পিচ গলানোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি অভিযোগ করেন, প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া সারাক্ষণ বিদ্যালয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে। বছরের পর বছর এই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্য থেকে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কালা ধোঁয়ার ফলে কোমলমতি শিশুরা ঠিকমতো নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছে না। তারা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েদের এই বিদ্যালয়ে আর পাঠাতে চাচ্ছেন না।

এ ছাড়া প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বিদ্যালয়ের লোহার আসবাবপত্র, গ্রিলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভাঙারি পোড়ানো বন্ধের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের মালিক নুরুল হক মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমার কাজ হচ্ছে না, হচ্ছে জাকাউল্লাহ সাহেবের কাজ। এ দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান মো: জাকাউল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাস বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement