১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

লালমোহনে সংস্কারপন্থীদের দাপটে কোণঠাঁসা বিএনপি নেতাকর্মীরা

জিয়া পরিষদ ভেঙে করা হচ্ছে বীর বিক্রম পরিষদ
-


ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই ভোলার লালমোহনে ভাঙচুর, চাঁদা উত্তোলন ও দখলদারিত্বে মেতে উঠেছে বিএনপির সংস্কারপন্থী কিছু নেতাকর্মী।
ওই এলাকার একাধিক জিয়া পরিষদ ভেঙে করা হচ্ছে- বীর বিক্রম পরিষদ। জামায়াত নেতা লায়ন আবুল হাসনাত হাসনাইনসহ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মূল ধারার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাও বাদ নেই এসব হয়রানিমূলক মামলা থেকে। আর এসবের নেতৃত্বে রয়েছেন লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েত। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় দফতরে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরে হারুনুর রশিদের দেয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ৫ আগস্ট স্বৈরসরকারের পতনের পর থেকেই ভোলার লালমোহনে শুরু হয় বিএনপির একাংশের লুটতরাজ, চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্বের দৌরাত্ম্য। ৩১ আগস্ট রাতে উপজেলা বিএনপির সংস্কারবাদী সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েতের নির্দেশে ভাঙচুর করা হয় পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গ্রাম সরকার প্রধান সোলায়মান মাতাব্বরের বাড়ি, হারুনুর রশিদের বাড়ি, ইউনাইটেড নেশন এনজিওর ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জামায়াত নেতা লায়ন আবুল হাসনাত হাসনাইনের বাড়ি। হামলার ভিডিও ফুটেজ অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়। হামলাকারীদের সাথে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব বাবুল পঞ্চায়েতের বৈঠকের ছবিও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়ার্ল্ড সিটিজেনের রিজিওনাল সেক্রেটারি ও জামায়াত নেতা লায়ন আবুল হাসনাত হাসনাইন বলেন, আমি বলেছিলাম- স্বৈরাচারী সরকাররের পতনের পর পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের রেখে যাওয়া- হাটবাজার, লঞ্চঘাট ও চলমান যাবতীয় উন্নয়ন কাজ শহীদ পরিবার ও আহতদের পরিবারের মধ্যে বণ্টনের জন্য, এতে চাঁদাবাজরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে।
এ ঘটনায় লালমোহন থানায় মামলা করতে গেলে উল্টো গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সন্তান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মেহেরান বুখারী ও তাদের পরিবারের সদস্য রাসেল মোতাব্বরকে। এ ছাড়াও জামায়াত নেতা আবুল হাসনাত হাসনাইনের বিরুদ্ধে লালমোহন এবং ঢাকা মোহাম্মদপুর থানায় চারটি মামলার এজাহার দিয়েছে স্থানীয় সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতারা।
হরিগঞ্জ বাজারে বিএনপি অফিসে এক দোয়া অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বিরোধীদের নির্যাতনের নির্দেশ দেন বিএনপি নেতা বাবুল পঞ্চায়েত। সেই বক্তব্যের ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই নির্দেশের আলোকে ইলিয়াস কালাম সরকার ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বে হরিগঞ্জ চরভূতা নমগ্রাম করিমুন্নেছো বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও লালমোহন উপজেলার শিক্ষক নেতা মিজানুর রহমান ফরিদ ও মেরিন একাডেমির ছাত্র মেহরুব হোসেন রুবায়েতকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়, এ সময় শিক্ষক নেতা মিজানুর রহমান ফরিদকে পিটিয়ে আহত ও দিগম্বর করা হয়। এ ধরনের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।

এ ছাড়াও দখল করা হয়েছে লালমোহনের কয়েকটি হাট বাজারের ইজারা, এসব দখল ও চাঁদাবাজির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড নয়া দিগন্তের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
লালমোহন উপজেলার কয়েকটি এলাকায় জিয়া পরিষদ ভেঙে করা হয়েছে বীর বিক্রম পরিষদ। যার নেতৃত্বে বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের অনুসারীরাই অগ্রাধিকার পেয়েছেন। যাদের কেউ কেউ ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে তালা লাগিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েত বলেন, আমি এসব কোনো ঘটনার সাথে জড়িত নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরাই এসব অভিযোগ দিচ্ছে। যার সাথে বিএনপি নেতা মার্শাল হিমু ও উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটব জড়িত রয়েছে।
বিএনপি নেতা মার্শাল হিমু বলেন- আমি সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান পরিষ্কার। দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
লালমোহন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, আমি আইন অনুযায়ী যাবতীয় কাজ করছি, বিএনপি নেতাদের নির্দেশে কোনো কাজ করছি না। জামায়াত নেতা লায়ন আবুল হাসনাত হাসনাইনের বিরুদ্ধে পুরনো কিছু অভিযোগ এসেছে, এগুলোর কোনো সত্যতা না থাকায় মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement