ফেনীতে বন্যায় ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি টাকা
- ফেনী অফিস
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ জেলা প্রশাসন ৩০ হাজার কোটি টাকা দাবি করলেও বাস্তবে ক্ষতি আরো বেশি হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। জেলার যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই শুধু ক্ষত চিহ্ন ভেসে ওঠে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, কৃষি, মৎস্য, পশু, বিদ্যুৎ লাইন, মোবাইল ফোন টাওয়ার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফেনী জেলায় ১৬ হাজার ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৫ টাকার ‘সম্পূর্ণ ক্ষতি’ এবং ১৪ হাজার ৪৯ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকার ‘আংশিক ক্ষতি’ হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২৫৫টি আধাপাকা ঘর, ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, দুই হাজার ৬৩২টি আধা পাকা ঘর, ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদে দুই হাজার ১৬৪ ভেড়া, ৩০ হাজার ৬৫০ গরু, এক লাখ ৬৭ হাজার ২৭৭টি হাঁস, ১১ হাজার ৪৮৭টি ছাগল, ১৯৪টি মহিষ, ৫৭ লাখ ২১ হাজার ৩০১টি মুরগি ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের ৭০৭ কিলোমিটারের বেশি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টি মসজিদ ও একটি মন্দির সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ২৪২টি মসজিদ ও ১৪৩টি মন্দির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর চৌধুরীপাড়া আল হুমায়রা বালিকা দাখিল মাদরাসা ও ফাজিলপুর শিবপুর উম্মুল মুমিনিন মহিলা দাখিল মাদরাসা সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। ঘোপাল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, শুভপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পাঠাননগর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২৪টি ও ফেনী সদরে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এভাবেই তুলে ধরা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন জরুরি। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ইউএনডিপি, ইউএনআরসি সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা আর্থিক সহযোগিতা করছে। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, র্যা ব, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিজ, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ, বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতা করছে। সশস্ত্রবাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলাদেরকে উদ্ধার এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। বন্যা-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় বিভিন্ন মেডিক্যাল টিম গঠন করে জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি যতগুলো সংস্থা এবং সংগঠন কাজ করছে তাদের সমন্বয় থাকা জরুরি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, চিকিৎসা, নগদ টাকাসহ অন্যান্য বিষয়ের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে জোর দিতে হবে। আমরা এখন ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেছি। দ্রুত খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য নতুন বীজ বিতরণ শুরু করেছি। কোনো এনজিও প্রতিষ্ঠান যাতে আগামী দুই মাস কিস্তি না নেয় সে জন্য বলে দেয়া হয়েছে।
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ঘর নির্মাণ, নগদ টাকা দান, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বন্যা-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।
জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যার সময় দুর্গম এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সময় ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। কষ্ট হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন, তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে উপযুক্ত মানুষটিই যেন ত্রাণসামগ্রী পান। এ জন্য তাদেরকে প্রত্যান্ত অঞ্চলে যেতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা