১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত

নিভে গেল সেরাজুলের চোখের আলো

নিভে গেল সেরাজুলের চোখের আলো -

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহজাদপুরের সেরাজুল ইসলামের চোখের আলো নিভে গেছে। শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের দরিদ্র মাছ বিক্রেতা জেন্দার আলীর ছেলে সেরাজুল উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোটাই ছিল তার স্বপ্ন। কিন্তু চোখের আলো নিভে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যাচ্ছে তার। শরীরে তার বিদ্ধ হয়েছিল ৭০টি বুলেট।
উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে সেরাজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন শরীর নিয়ে নিথর দেহে সেরাজুল শুয়ে আছেন বিছানায়। কালো চশমায় ঢেকে রেখেছেন দু’টি চোখ। দুনিয়ার আলো নিভে গেছে তার। সন্তানের এমন করুন দশায় একটু যন্ত্রণা লাঘবে অনবরত মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন পাগলপ্রায় মা।
সেরাজুলের বাবা জেন্দার আলী ও মা রোজিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, সারা দেশের লাখ লাখ ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয় সেরাজুল। ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানার সামনে কর্মসূচি পালন করার সময় পুলিশের অতর্কিত গুলিতে ঝাঁঝরা হয় সেরাজুলের শরির। রক্তাক্ত শরীরে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তার বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, মাথা, বুক, উড়ু, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ৭০টি বুলেটে ঝাঁঝরা হয়েছে সেরাজুলের শরীর। সবচেয়ে বিপজ্জনক বুলেটটি ঢুকেছে চোখের ভিতরে। চিকিৎসকরা সেখানে চিকিৎসা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বুলেট বের করলেও চোখের আলো নিভে যায় সেরাজুলের।
বাবা জেন্দার আলী বলেন, ‘আমার বড় ছেলে রেজাউল ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিন দুই ভাই এক সাথে বের হয়। বড় ছেলের শরীরে ২০টি গুলি লাগে। সে বর্তমানে সুস্থ আছে। আমি মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। এই কষ্টের মধ্যেই ছেলে দুটোকে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হাসিনার সরকারকে হটাতে আমার এক ছেলে আহত আরেক ছেলে চোখ হারিয়েছে। বর্তমান সরকার যাদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়, তা হলে হয় তো কোনো একটি উপায় হতে পারে আমাদের। তা না হলে আমরা যে অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম।
শরীরে বুলেট নিয়ে আহত সেরাজুল বলেন, শরীরে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন থাকলেও তার কোনো অভিযোগ নেই। শান্তনা একটাই, তার চোখের বিনিময়ে হলেও দেশ ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে মুক্ত হতে পেরেছে।
এদেশ যেন ভালো থাকে, বৈষম্যহীনভাবে চলতে পারে, আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়- সেই আশাই করছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement