ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্র
- এইচ এম হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
- ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
কুয়াকাটার মানচিত্রটি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। এতে দীর্ঘ বেলাভূমি প্রতি বছর প্রস্থতা হারাতে হচ্ছে সঙ্কুচিত। সাগরে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। বেলাভূমিজুড়ে বিশাল সবুজ বেষ্টনী হচ্ছে উজাড়। সৈকতের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সৈকত কোথাও নিচু, কোথাও উঁচু এবং জিও ব্যাগ রয়েছে এলোমেলো ভাবে। এমনকি কোথাও কোথাও ছোট-বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীসহ ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, স্থায়ী উদ্যোগ না নিলে হুমকির মুখে পড়বে পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। তাই সৈকত ও বেলাভূমি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে পছন্দের একটি স্থান। বিশেষ করে কুয়াকাটা সংলগ্ন ফাতরার চর বা টেংরাগিরি বনাঞ্চল, সমুদ্রের নিঃসীম জলরাশি এবং একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে ছুটে আসছেন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ এর নাম দিয়েছেন সাগরকন্যা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র সৈকতের গতিধারা বদলে গত দেড় দশকে কুয়াকাটা সৈকত হারিয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রস্থতা। বিলীন হয়েছে নারিকেল বাগান, ঝাউ বাগান, ইকোপার্ক, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীসহ কয়েকশ’ স্থাপনা। এক দশক আগেও কুয়াকাটা সৈকতের দৈর্ঘ্য ছিল ১৮ কিলোমিটার আর প্রস্থ ছিল তিন কিলোমিটার।
যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে কেন্দ্রীয় ঘাটলা মসজিদ, মাদরাসা, রাধাকৃষ্ণ সেবাশ্রম, ট্যুরিজম পার্ক ও অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলসহ ঝিনুক মার্কেট। ইতোমধ্যে সমুদ্রে চলে গেছে কয়েক হাজার একর বনভূমি, ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, রাজস্ব বোর্ডের বাংলো, এলজিইডির বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও বাড়িঘরসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সৈকত রক্ষায় ৭৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে পাউবো।
পটুয়াখালী বন বিভাগ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কুয়াকাটা সৈকতে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ইকোপার্কসহ রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ।
পটুয়াখালী বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, সৈকতে এক সময় ৩ হাজার ৩৮৭ একর বনভূমি থাকলেও এখন মাত্র ১ হাজার ৩০০ একর অবশিষ্ট আছে। সৈকত এলাকার বাচ্চু বলেন, গত চার দশক আগে বাড়ি থেকে সমুদ্রের পাড়ে যেতে এক দুপুর সময় লাগত। আর এখন বাড়িঘরের কাছে এসে গেছে।
গণমাধ্যম কর্মী ও কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই করতে বছরের পর বছর পার করছে। সৈকত রক্ষায় কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও কোনো কাজে আসছে না। হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে হুমকির মুখে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ৭৫৯ কোটি টাকার পরিকল্পনা অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় জিওব্যাগ দেয়ায় গত রেমালে সৈকত রক্ষা পেয়েছে। সৈকতকে এখনই রক্ষা করা না হলে বর্ষা মওসুমে আরো ক্ষতি হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা হয়েছে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ধুলাসার ১২ কিলোমিটার মেরিন ড্রেইপ ডিওলেটার দেয়া হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে।