১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সাতক্ষীরায় বাড়ছে আত্মহননের ঘটনা

৬ মাসে ১১ শিক্ষার্থীসহ ২৪ জনের মৃত্যু
-

সাতক্ষীরায় দিন দিন বাড়ছে আত্মহননের ঘটনা। গত ছয় মাসে জেলায় ১১ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ২৪ জন আত্মহত্যা করেছে। আত্মহননকারী এসব শিক্ষার্থীর বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলায় সর্বাধিক নয়জন আত্মহত্যা করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারজন অত্মহত্যা করে শ্যামনগর উপজেলায়। পারিবারিক অশান্তি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, প্রেমে ব্যর্থসহ বিভিন্ন কারণে জেলায় আত্মহননের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সমাজবিদদের ধারণা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাসে জেলায় অন্তত ১১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে মে মাসে পাঁচজন, এপ্রিল মাসে তিনজন, মার্চ মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনজন এবং জানুয়ারি মাসে একজন আত্মহত্যা করে। আত্মহননকারীদের একটি বড় অংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া পারিবারিক অশান্তির কারণেও স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছে অনেকে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ জুন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসে আত্মহত্যা করেন কালিকাপুর মধ্যপাড়ার আব্দুল মালেকের মেয়ে ও রামনগর গ্রামের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী পারভীন সুলতানা। একই দিন দক্ষিণ খাজরা গ্রামের জরিনা খাতুন, ১০ জুন জয়াখালী গ্রামের দশম শ্রেণীর ছাত্রী খাজুরী সুলতানা জুই ও পানিয়া গ্রামের মৌসুমী পারভীন, ১৫ জুন প্রেমিকের ওপর অভিমান করে হাতবাস গ্রামের কলেজছাত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার, ২০ জুন কেঁড়াগাছি গ্রামের রিয়া আক্তার, ২১ জুন বহেরা গ্রামের আব্দুস সালাম, ২৪ জুন মির্জাপুর এলাকার দশম শ্রেণীর ছাত্রী অমৃতা ঘোষ, ২৬ জুন চকবারা গ্রামের মনিরুল ইসলাম বাবু, ২৯ জুন গাবুরার সোরা গ্রামের হাসান মালী আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া গত ৩০ জুন কালিগঞ্জে বৃষ্টি মণ্ডল নামে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী বিষপানের ২৫ দিন পর মারা যায়। এর আগে মে মাসে পাঁচজন, এপ্রিল মাসে তিনজন, মার্চ মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনজন ও জানুয়ারি মাসে একজন আত্মহত্যা করেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও ‘নিজ অধিকার’ নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. দিলীপ কুমার দেব বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে আশাহীন মানুষের মধ্যে আশা জাগাতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আগে থেকেই এগুলো চিহ্নিত করে চিকিৎসা দিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যার অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে- মেজর ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তি, সিজোফ্রেনিয়া ও আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তেমন ব্যক্তিরা। অথচ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তেমন ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা টিটকারি, অবহেলা বা অবজ্ঞা করি। যারা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যার হার তাদের ছয় গুণ বেশি। তারা সামান্য কারণে ভেঙে পড়ে, হতাশ হয়, ক্ষুব্ধ হয় ও গ্লানিতে ভোগে। পরিবার ও স্কুলে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের আচরণ যত বিরক্তিকর, অসহ্য মনে হোক না কেন-ঘৃণা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করা ঠিক হবে না। বরং তাদের দরকার যতœ, স্নেহ, সহায়তা ও প্রয়োজনে প্রফেশনাল কাউন্সেলিং।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মুনিরুদ্দীন বলেন, আত্মহত্যার সংবাদ প্রচারে মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা অনেক। কেননা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘অনুকরণ’ করে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই পত্রপত্রিকা ও টিভিতে দায়িত্বশীল এবং সংবেদনশীল রিপোর্টিংয়ের জন্য ১০টি নীতিমালা ঠিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুইসাইড নোটের বিবরণী প্রকাশ করা যাবে না। অনুমাননির্ভর কারণ বা উসকে দেয়া কাহিনী প্রচার করা যাবে না। কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা যেহেতু সংক্রামক, তাই তাদের আত্মহত্যার খবর বিশেষ সতর্কতার সাথে প্রকাশ করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement