১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গলাচিপায় ল্যাম্পি স্কিন রোগে শতাধিক গরুর মৃত্যু

‘মুই ভাতই খাইতে পারি না কিস্তি দিমু কী দিয়া’
-


‘মোর গরুটা কথা শুনতো, উঠতে বললে উঠত আর খাইতে বললে খাইতো। মুই কোথায় যাইলে গরুটাকে বইল্লা যাইতাম- দড়ি ছিঁড়বি না, শুইয়া থাকিস। এখন আমি কার কাছে বইল্লা যামু।’ গরুটি মারা যাওয়ার পর কান্না থামাতে পারছে না স্বামীহারা অসহায় নারী রাবেয়া বেগম। ‘বুঝতে পারলাম না মোর গরুটার কী হইছে। এখনো সাত হাজার টাকা কিস্তি পাবে। প্রতি মাসে কিস্তি ৪৫০ টাকা। এখন মুই কিস্তি দিমু কী দিয়া ভাতই খাইতে পারি না। এক বছর আগে গরুটি ক্রয় করি।’ উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্দিক হাওলাদারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম এই প্রতিবেদককে এ কথাগুলো বললেন।

গোলখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আফছার উদ্দিন জানান, রাবেয়া বেগমের স্বামী নেই। কোনো জায়গা জমিও নেই। সম্পদর মধ্যে ছিল তার গরুটা। ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গরুটি গত দুই দিন আগে মারা গেছে।
গলাচিপা উপজেলায় কয়েক মাস ধরে গরুর ল্যাম্পি স্কিন দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হয়ে শতাধিক গরু মারা গেছে। আরো প্রায় কয়েক হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ উপজেলার পশুর হাটগুলোতেও। কমে গেছে গরুর বেচাকেনার হার। গলাচিপা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, এ উপজেলার সব ইউনিয়ন থেকেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মারা যাওয়া গরুগুলোর বেশির ভাগই বাছুর।

চরবিশ্বাস কেরামত আলী মহাবিদ্যালয়ের এক প্রভাষক পানপট্টি এলকার বাসিন্দা কামাল হোসেনের নিজের খামারের দু’টি গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে। উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান জানান, তালুকদার হাওলা গ্রাম থেকে মনির মাতবর, আ: আলী মাতব্বর, হামিরুল খন্দকার, শাহজালাল সিকদারের একটি করে মোট ১২টি গরু মারা গেছে।
চরখালী গ্রামের সমাজসেবক সোবাহান মিয়া জানান, ল্যাম্পি স্কিন রোগ হলে প্রথমে পশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, পশুর খাবারের প্রতি অরুচি আসে। জ্বর বেশি হলে নাক-মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: সজল দাস জানান, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাস-জনিত রোগ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগটি সাধারণত মশা ও মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই আক্রান্ত পশুটিকে সেরে উঠতে সময় লাগে। মশা ও মাছি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব। এ জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
ডা: সজল দাস আরো জানান, এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে হলে গৃহপালিত পশুগুলোকে সুস্থ অবস্থায় এ রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া পশুর প্রাথমিক অবস্থায় শরীরের কোনো কোনো স্থানে ফুলে যায় এবং গোটা দেখা দেয়। এ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক করা ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement