১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মধুমতী নদীর ভাঙনে বিলীন শতাধিক বসতঘর

দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
মধুমতীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে ঝুপড়ি ঘরে : নয়া দিগন্ত -

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে মধুমতী নদীর ভাঙনে গ্রাম ছেড়েছে শত শত পরিবার। এবারো বর্ষা মৌসুমের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। ভাঙনপাড়ের পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে। প্রতিনিয়ত তাদের একটাই চিন্তা কখন যেন তাদের বসতভিটা মধুমতী নদীগর্ভে চলে যায়। এর পর পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন জানা নেই তাদের। স্বাধীনতার পর থেকে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি, ভিটেমাটি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা ও পাকা রাস্তাসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের খুঁটি।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায় ভাঙনের ভয়াবহতা এবং নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি। স্থানীয়রা জানান, বার বার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙনরোধের আশ্বাস দিলেও হয়নি কোনো প্রতিকার। বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশ’ পরিবার। তাই দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান চায় এলাকাবাসী।
কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের শরিফা বেগম জানান, তাদের পূর্বপুরুষের ১০০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের জমি বর্গাচাষ করে জীবিকানির্বাহ করেন। এ পর্যন্ত তিন বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। এবারো ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে।
তেলকাড়া গ্রামের হাসমত শিকদার জানান, স্বাধীনতার পর থেকে শত শত পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে অন্য জায়গায়। অনেক আপনজন কোথায় যে গেছে খেঁাঁজ জানা নেই। তাদের সাথে কখনো আর দেখা হবে কি না তাও তিনি জানেন না।
তেলকাড়া গ্রামের রুব্বান বেগম ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান জানান, তাদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি এখন নদীর ওপার গোপালগঞ্জে চলে গেছে। তাদের এ জমিগুলো জবরদখল করে রেখেছে ওই এলাকার লোকজন। পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওইসব পরিবারের সদস্যরা। এবার বসতবাড়ি ভাঙলে আর মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না তাদের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্টু শিকদার জানান, কয়েক বছর আগে এ ওয়ার্ডে এক হাজার ৭০০ ভোটার ছিল, সেটি কমে এখন এক হাজার ভোটার আছে। ভাঙনরোধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে পুরো এলাকা। তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাসহ সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষেয়ে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফি উল্লাহ বলেন, নড়াইল সীমানায় মধুমতী নদীর সবগুলো পয়েন্টের ভাঙনরোধে সংসদের হুইপ ও এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙনরোধে ওইসব এলাকায় কাজ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এমপি মাশরাফীর প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর এলাকায় ভাঙনরোধে অনুমোদন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, তেলকাড়া গ্রামের মধুমতী নদীভাঙনরোধে আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন দেয়া আছে। প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেলে আগামীতে ওই এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement