০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কাটেনি শিক্ষক ও আবাসন সঙ্কট, রয়েছে সেশনজট

-


দেশের অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি)। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ৭২ বছরে পা দিয়েছে। মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের অধিক। তবে প্রতিষ্ঠার সাত দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো আবাসন সঙ্কট, সেশনজট আর শিক্ষক সঙ্কট থেকে বের হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ৭৫৩ একর বা ৩০৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বর্তমানে ১২টি অনুষদে ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। উত্তরাঞ্চলের মানুষের পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে সাত দশকের বেশি সময় ধরে গৌরবের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তবে, প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরেও ৪০ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত হয়নি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ২৬ হাজার ৩৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৭টি হলে মাত্র ৯ হাজার ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী থাকছেন। বাকি ১৬ হাজার ৬৯৭ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকাগুলোয় মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়।

অন্য দিকে, দেশের বৃহত্তম স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যাপীঠ হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শিক অনুপাত নেই। অপর দিকে সৃষ্ট পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪০০ শিক্ষক পদ। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান।
এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি অনুষদে ৬১টি বিভাগের মধ্যে অধিকাংশ বিভাগেই সেশনজট রয়েছে। সেশনজটমুক্ত মাত্র রয়েছে মাত্র পাঁচটি বিভাগ। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা চার বছর শেষ করেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি।
অন্য দিকে, শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক মান ও পরিবেশ। সরেজমিনে দেখা যায়, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, বাংলা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি, শারীরিক শিক্ষা, ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে পাঁচ থেকে ছয় ব্যাচের বিপরীতে দুই-তিনটা শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম। ফলে গাদাগাদি করে ক্লাসে বসতে হয় তাদের। এ ছাড়া নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষা ও গবেষণার যথোপযুক্ত পরিবেশ, মাদক, নিরাপদ পানি, মানহীন খাবার এবং মেডিক্যাল সুযোগ-সুবিধা নিয়েও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭১ বছর অতিক্রম করেছে। এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিশ্চয়ই গৌরবের। আমরা শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, গবেষণার সুনাম, প্রভাব, অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে। তবে, কিছু জায়গায় এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রাক্তন সব শিক্ষার্থী, গবেষক ও শুভাকাক্সক্ষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
ভিসি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণায় বর্তমানে অনেক দূর এগিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রথ্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিচ্ছে। তবে কিছুটা সঙ্কট থাকবেই। শতভাগ নিশ্চিত করা তো সম্ভব নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে সঙ্কট নিরসনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুন্নত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement