০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

দৌলতদিয়ায় ঝুঁঁকিতে ফেরিঘাট ও স্কুলসহ বহু বসতবাড়ি

নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা : নয়া দিগন্ত -

পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটসংলগ্ন দোকান পাটসহ তিন শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে দৌলতদিয়া ঘাটের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ফেরিঘাট। দৌলতদিয়ায় বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭ নম্বর ঘাটটি বন্ধ হলে ফেরি চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ঘাট রক্ষায় ৬ ও ৭ নম্বরের মাঝামাঝি স্থানের ভাঙনরোধ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
দৌলতদিয়া ইউপি কার্যালয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাপারের দৌলতদিয়া ইউনিয়নে ১৯৯৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ২৯ বছরে নদীভাঙনে ইউনিয়নের ২৪টি গ্রাম পদ্মায় হারিয়ে গেছে। এলাকার ২১টি মৌজার মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র চারটি। আর এর মধ্যে বর্তমান উত্তর দৌলতদিয়া, দক্ষিণ দৌলতদিয়া, চর দৌলতদিয়া ও বাহিরচর দৌলতদিয়া এ চারটি মৌজার অস্তিত্ব রয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাট ভেঙে মাত্র এক কিলোমিটার পশ্চিমে এলেই মরাপদ্মা নামে একটি নদীর সাথে মিশে গেলেই দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পদ্মায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নদীভাঙনরোধে দীর্ঘদিনের গণদাবি থাকা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদীবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর রক্ষায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা গেলে গোটা গোয়ালন্দ ভাঙনের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় এমপি, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শন শেষে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলার আশ্বাস দেয়ার পরও কাজ শুরু করেনি।
গতকাল দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝামাঝি সাত্তার মেম্বারপাড়া এবং ১ নম্বর ফেরিঘাট থেকে ৪ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝে সিদ্দিক কাজীরপাড়া গ্রাম এলাকায় ভাঙন চলছে। এতে টিউবওয়েল, চুলা, টয়লেট নদীতে বিলীন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক পরিবার। আর ভাঙন আতঙ্কে দু’টি গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে, গাছপালা কেটে ভিটেমাটি ফেলে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহানারা বেগম ও ইব্রাহিম খলিল বলেন, ৭ নম্বর ঘাটের পাশে চালাকপাড়ায় তাদের বাড়ি। তাদের জন্মস্থান ও বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। এর আগে তাদের কারো কারো বাড়ি তিন থেকে ছয় বার ভেঙেছে।
দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রতিবছর নদীভাঙনে এ ইউনিয়নের মানচিত্র ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর ভাঙনকবলিত স্থানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও তীব্র ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয় না।
বিআইডব্লিউটিএর দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, চালু থাকা ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
রাজবাড়ী পাউবোর প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, জেলায় পদ্মা নদীর ৫৭ কিলোমিটার তীর রয়েছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিআইডব্লিউটিএ। ঘাট ব্যতীত অন্য সব স্থানে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 


আরো সংবাদ



premium cement