শ্রীমঙ্গলের কাগজি লেবুর কদর দেশ-বিদেশে
- এম এ রকিব শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
- ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি রয়েছে নানান কারণে। এখানের উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলাজুড়ে ঘন সবুজের বিস্তৃতির পাশাপাশি মিশে আছে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের নির্জনতা আর মাটির উর্বরতা। এসব বৈশিষ্ট্য যুগ যুগ ধরে শ্রীমঙ্গলের ভৌগোলিক অবস্থানকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। এখানে চায়ের পরই অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে ধরা হয় কাগজি লেবুকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রীমঙ্গলের চায়ের পাশাপাশি লেবুর ভূমিকাও অনেক। এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন জাতের রসে ঠাসা সুগন্ধযুক্ত কাগজি লেবুর কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি জনপথে লেবুর চাষাবাদ শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে। লাভজনক হওয়াতে চাষিরা উৎসাহ নিয়ে ব্যাপকহারে লেবুর চাষাবাদ করেন। বর্তমানে লেবুর দাম অনেক কম হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন। তারপরও প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে ঠেলাগাড়ি আর ভ্যানে করে বিক্রির জন্য শহরের নতুন বাজারে লেবু নিয়ে আসেন তারা স্থানীয় আড়ৎদারদের কাছে। আড়ৎদারদের কাছ থেকেই পাইকাররা নিলামে লেবু ক্রয় করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেন।
এখানকার পাহাড়-টিলার ভাঁঁজে ভাঁজে সারা বছরই লেবুর চাষ এবং ফলন হয়। পাইকারদের মাধ্যমে এসব পাহাড়ি লেবু পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। বর্তমানে লেবুর ভরা মৌসুম হওয়ায় শ্রীমঙ্গলের নতুনবাজারের আড়ৎগুলো মুখরিত হয়ে আছে লেবু বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কোলাহলে। ভোর বেলায় বিভিন্ন বাগান মালিকরা ঠেলাগাড়ি আর ভ্যানে করে বাজারে নিয়ে আসেন রকমারি জাত ও সাইজের লেবু। ভোর ৫টা থেকে সকাল আটা পর্যন্ত পাইকারদের হাকডাকে মুখর থাকে বাজার।
আড়ৎদার আশিক মিয়া জানান, দেশে মোট উৎপাদিত লেবুর ৫০-৬০ শতাংশই উৎপন্ন হয় শ্রীমঙ্গলে। কয়েক বছর আগে দেশের ৭০-৭৫ শতাংশ লেবুর দাহিদা মিটানো হতো শ্রীমঙ্গলের লেবু দিয়ে। এখন দেশের অন্যান্য পার্বত্য জেলাতেও লেবুর চাষ হচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গলের অরণ্যঘেরা সমতল ভূমির লেবু যেমন রসালো, তেমনি সুগন্ধযুক্তও। বর্তমানে বাজারে আকার ভেদে প্রতি হাজার লেবুর পাইকারি দর ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। খুচরা প্রতি হালি বিক্রি হয় ১০ থেকে ৪০ টাকায়। তবে মাসখানেক আগেও প্রতি হাজার লেবুর পাইকারি দাম ছিল ২৫ শ’ থেকে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে লেবুর দাম সবচেয়ে কম।
লেবু ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া জানান, শ্রীমঙ্গলের লেবু শুধু দেশেই জনপ্রিয় নয়, এ অঞ্চলের লেবু রফতানি হচ্ছে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তিনি জানান, প্রতি বছরে শত কোটি টাকার কাছাকাছি লেবু কেনা-বেচা হয় শ্রীমঙ্গলে। আরেক পাইকারি ক্রেতা পারভেজ মিয়া বলেন, প্রতিদিন ছোট, বড় মিলিয়ে তিনি ৬-৭ ট্রাক লেবু পাঠিয়ে থাকেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ীর কাঁচা বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি।
লেবু বাগান মালিকরা অড়ৎদারদের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। এখানে বর্তমানে ২৫-৩০টি আড়ৎ রয়েছে, যারা কমিশনের ভিত্তিতে এসব লেবু বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া স্থায়ী পাইকার রয়েছেন ৩০-৩৫ জন। তাদের নিয়ন্ত্রণেই পুরো শ্রীমঙ্গলের লেবুবাজার। বিভিন্ন প্রসাধনী, ক্যামিকেল ও বেভারেজ কোম্পানিগুলোও তাদের কাছ থেকে লেবু কিনে নেন।
শ্রীমঙ্গলে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাস বিপুল পরিমাণে লেবুর ফলন হয়। এক সময় লেবু শুধু পাহাড়ি টিলায় চাষাবাদ হতো। বর্তমানে সমতল ভূমিতেও লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
তবে স্থানীয়ভাবে লেবু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের কোন ব্যবস্থা না থাকায় লেবুর ভরা মৌসুমে চাষিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পান না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন জানান, বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে আট হাজার হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে কাগজি লেবু ও চায়না লেবু। এছাড়া সিডলেস (বীজবিহীন) লেবুর চাষও হচ্ছে প্রচুর। সেই সাথে চাষ হচ্ছে জারা, আদা, কাঁটা লেবুসহ কিছুটা ভিন্ন জাতের লেবুর।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা