১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অস্তিত্ব সঙ্কটে বড়াল, বর্ষাতেও পানি নেই

নদীতে ফুটবল খেলছে একদল কিশোর। ছবিটি শালইনগর এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা : নয়া দিগন্ত -

নাটোরের বাগাতিপাড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীর দুই স্থানে অপরিকল্পিত সøুইসগেট নির্মাণ ও তীরে মাটি ফেলে দখল করায় বড়াল আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। সিলেটসহ দেশের অনেক স্থানে বন্যা দেখা দিলেও বড়াল নদী এখন বর্ষাকালেও পানি শূন্য ধু-ধু বালুচর।
স্থানীয়রা জানায়, বড়াল নদীটি রাজশাহীর চারঘাট এলাকা থেকে পদ্মার শাখা হিসেবে বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে হুড়াসাগরে মিশে যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটি এক সময় স্রোতময় ছিল। বর্ষার সময় দুইধার প্লাবিত হতো। স্পিডবোট, বড়-বড় নৌকাসহ বিভিন্ন যান চলাচল করত। কিন্তু ১৯৮৫ সালে রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় পদ্মাসংলগ্ন বড়াল নদীর উৎপত্তি স্থলে সরকারি অর্থায়নে একটি সøুইসগেট নির্মাণের পর থেকেই বড়ালের যৌবনে ভাটা পড়ে এবং স্রোতহীন হয়ে পড়ে নদীটি। বন্যায়ও আর প্লাাবিত হয় না। বড়াল সংলগ্ন বিভিন্ন পলিমিশ্রিত মাঠে পানি না পাওয়ায় নদীর দু’তীরের জমির উর্বরাশক্তিও দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। খরা মৌসুমে দু’কূলের জমিতে সেচকাজও ব্যাহত হতে থাকে।
বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয়দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালে পুনরায় সরকারি অর্থায়নে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘড়িয়ায় আরো একটি সøুইসগেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটিও সফল হয়নি। চারঘাটের চেয়ে আটঘড়িয়া এলাকা নিচু হওয়ায় ওই সøুইসগেট বন্ধ করে বড়াল নদী পানিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করলে চারঘাট এলাকা অর্ধপূর্ণ না হতেই আটঘড়িয়া অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। আর ওই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়।
এ ছাড়া স্থানীয়রা নদীর তলদেশ থেকে মাটি কেটে দুই পাশ বেঁধে ফসল চাষের উপযোগী করায় দিন দিন নদীটি ভরাট হয়ে অনেক স্থানে খালের আকার ধারণ করেছে। তাই উপজেলাবাসীর দাবি, নদীর দুই স্থানের অপরিকল্পিত সøুইসগেট অপসারণসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে দেয়া।
উপজেলার তকিনগরের নদীসংলগ্ন স্থায়ী বাসিন্দা শিক্ষক আবদুল বারী বলেন, বর্ষাকালে একসময় বড়াল নদী ভয়ঙ্কর ছিল। পানির স্রোতের শব্দ শুনলেই ভয় লাগত। কিন্তু চারঘাট এলাকায় পদ্মা নদীসংলগ্ন স্থান ও আটঘড়িয়া এলাকায় উজান-ভাটিতে সøুইসগেট নির্মাণ করায় নদীটি এখন মৃতপ্রায়।
উপজেলা নদী রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাদি বলেন, বড়াল নদীর মূল প্রতিবন্ধকতাই হলো সøুইসগেট। আবার নদীর দুই তীরের জমির মালিকরা ফসল চাষের জন্য মাটি দিয়ে ভরাট করায় নদীটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীটি রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ অনেকবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে দ্রুত সøুইসগেট দু’টি অপসারণ ও পরিকল্পনা করে খনন করতে হবে। তা ছাড়া বর্তমানে এই উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে যে পরিস্থির সৃষ্টি হয়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে মরুভূমিতে পরিণত হবে।
এ বিষয়ে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, বড়াল নদীর অববাহিকায় পানিসম্পদ পুনরুদ্ধার শীর্ষক ৫৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে বড়াল নদীর ১৫৩ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। তবে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement