সিলেটে বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ফসলিজমির ব্যাপক ক্ষতি
- এ টি এম তুরাব সিলেট
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেটে ক্ষয়ক্ষতির যেন শেষ নেই। ঘরবাড়ি, ফসলিজমি, রাস্তাঘাট, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আটকে থাকা পানি নামার সাথে সাথে এখন সর্বত্রই দৃশ্যমান হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের চিত্র। তবে এখনো পানিতে টইটুম্বুর সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৯টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আর ১৩টি উপজেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দীঘি-খামার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
সড়ক : বন্যার ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন সড়কগুলো দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। বন্যার ভয়াবহতা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে এই সড়কের ক্ষত চিহ্নগুলো দেখার পর। পানির চাপ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ-ঘরবাড়ি যেমন দুমড়েমুচড়ে যায়, ঠিক তেমনি করে দুমড়েমুচড়ে গেছে সড়কগুলো। এলজিইডি সূত্র বলছে, জেলার সড়ক বিভাগের ১৩ উপজেলায় ১৬০ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানায়, নগরের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
ফসলি জমি : সিলেটের ১৩ উপজেলার ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ জন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
মৎস্য : সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় এ জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘী-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। এ উপজেলার ৬ হাজার ৭৫৫টি পুকুর-দিঘি-খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্বাস্থ্য : সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পানি নামার পর দেখা যায়, হাসপাতালটির এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে বন্ধ রয়েছে এসব সেবাকার্যক্রম। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইপিআই আইএলআর ফ্রিজ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্সরে মেশিন, এমএসআর সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব যন্ত্রপাতি কতটা সচল কিংবা অচল তা পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত যাচাই করা যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর উল্লেখ করে, সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। ৮৫টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়াও ৯২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক পানিতে নিমজ্জিত হয়। জেলার তিনটি উপজেলা (জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ) বাদে বাকি ১০টি জলমগ্ন ছিল। স্রোতের কারণে অনেক আসবাবপত্র ভেসে গেছে।
এ দিকে বিভাগের চার জেলার অনেক এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। কেবল সিলেটের সুরমা অঞ্চল ঘেরা বিভিন্ন নদীর পানি কিছুটা কমার খবর পাওয়া গেছে। অন্য দিকে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায় বন্যার পানি কমেছে। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করছেন।