১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দাম বাড়ানো হলেও আখ চাষে অনাগ্রহী চাষিরা

জিল বাংলা সুগার মিলে ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি
-


আখের দাম বৃদ্ধি করা হলেও আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষিভিত্তিক খাদ্য ও চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা সুগার মিলস্ লিমিটেডের আখ চাষ জোনের আখ চাষিরা।
তারা জানান, মিলে আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পুর্জি) পেতে দুর্নীতি-অনিয়ম, সময়মতো আখ বিক্রির অনুমতিপত্র না পাওয়া, বিক্রিত আখের মূল্য পেতে বিড়ম্বনা ও বিলম্ব হওয়া এবং আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় জিল বাংলা সুগার মিল জোনের কৃষকরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কৃষকরা জানান, আশ্বিন মাসে আখ রোপণ করতে হয়। আর সেই আখ বিক্রি করতে সময় লেগে যায় এক থেকে দেড় বছর। এতে দীর্ঘমেয়াদি ফসল চাষে তেমন লাভ করা যায় না।

কৃষকরা আরো বলেন, একজন আখ চাষিকে এক গাড়ি আখ বিক্রির জন্য একটি পুর্জি পেতে হাজার টাকা থেকে কোনো কোনো সময় আরো বেশি টাকা ঘুষ গুনতে হয়। এ ছাড়া খেত থেকে মিলে আখ সরবরাহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পুর্জি বিলম্বের কারণে আখ মরে শুকিয়ে গেলে মিল থেকে নেয়া ঋণের একটি টাকাও মওকুফ হয় না। কৃষকরা বলেন, আখের বিকল্প হিসেবে স্বল্প সময়ে বেশি লাভের ফসল ভুট্টা, ধান, পাট, শাক-সবজি ও মরিচকে তারা বেছে নিয়েছেন।
জিল বাংলা সুগার মিলের একজন বড় আখ চাষি ইসলামপুর উপজেলার পার্থশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বলেন, এক সময় ৬০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। গত বছর ছিল মাত্র ছয় বিঘা। আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিক্রির পুর্জি পেতে টাকা দিতে হয়। মিল কর্তৃপক্ষ সময় মতো সার-বীজ সরবরাহ না করে অসময়ে সরবরাহ করে। আখ বিক্রির টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না। টাকার স্লিপ মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে বিক্রি করে দিতে হয়। আরো নানা সমস্যার কারণে আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছি।
দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরবাদ ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া গ্রামের চাষি বাচ্চা গেল্লা, আবু সাইদ, আবুল, দুলু, খুদি, আকা মিয়া, আব্দুল হক, শাহ আলমসহ আরো অনেকে বলেন, আখ চাষের লাভ নেই। দেড় বছরে একটা মাত্র আখের (কুইশেল) আবাদ করা যায়। আখ চাষ না করলে একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলানো যায়। সর্বোপরি সুগার মিল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা বাধ্য হচ্ছি আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে।

তবে সুগার মিল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলছেন, বেসরকারি মিল মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো চিনির মূল্য বাড়িয়ে লাভবান হচ্ছেন। সরকারি সব সুগার মিল বন্ধ হলেই তারা খুশি। আখ মাড়াই মৌসুমে মিল কর্তৃপক্ষ চাষিদের আখের যে মূল্য দেয় তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে আখ কিনে গুড় তৈরি করেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। গুড় মাড়াই বন্ধ করতে গেলে তোপের মুখেও পড়তে হয় মিল সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও থাকেন তাদেরই পক্ষে।
২০-২৫ বছর আগে আখের মূল্য ছিল ১৫-২০ টাকা মন। চিনির দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি। ২০২০ সালে আখের দাম বাড়িয়ে করা হয় ১৪০ টাকা মন। চিনির দাম ৫৫-৬০ টাকা কেজি। তা ছাড়া, মিল চালাতে যেসব উপকরণের প্রয়োজন সেগুলোর দামও বেড়েছে ১০০ থেকে হাজার গুণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চিনি ও আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও দিনদিন কমে যাচ্ছে আখ চাষ। যেকারণে ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে মিলের আখ চাষ জোন এরিয়ার পরিধি। ফলে এক-তৃতীয়াংশ সময়ও চলছে না মিলের আখ মাড়াই মৌসুম।
মিলের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত আখ মাড়াই মৌসুমে ৫ হাজার ৫০০ একর জমি আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় মাত্র ৪ হাজার ৭০৪ একর।
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আগামী মৌসুমে ৫ হাজার একর আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমের চেয়ে ৫০০ একর কম। কিন্তু আখ রোপণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭০৫ একর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯৫ একর কম।


আরো সংবাদ



premium cement