০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

গ্রামীণ মেঠোপথে সুগন্ধি ছড়ানো বিলুপ্ত প্রায় কদম ফুল

জয়ন্তী নদীর তীরে কদম গাছটির ফুল মোহিত করছে পথচারীদের : নয়া দিগন্ত -

বরিশালের মুলাদী উপজেলার গ্রামীণপথ সাজিয়ে রাখা কদম ফুল এখন আর তেমন দেখা যায় না। আগে গ্রামীণ পথ দিয়ে চললেই চোখ কেড়ে নিতো পথের পাশে ফোঁটা হলুদ আর সাদা রঙের থোকা থোকা কদম ফুল। গ্রামীণ মেঠো পথ সুগন্ধি ছড়ানো কদম ফুল আজ বিলুপ্তির পথে। মুলাদী পৌর সদর গোডাউন রোড জয়ন্তি নদীর তীরে কদম গাছটির ফুলের সুগন্ধি মাতোয়ারা করে রাখে ব্যবসায়ীসহ পথচারীদের। ক্ষণিকের জন্য হলেও কদম ফুলের সুগন্ধিতে পথিকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় গাছটি।
গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে যখন আম, কাঁঠালের ঘ্রাণে মুখর চারপাশ, ঠিক সে সময় আষাঢ়ে বাদলের দিনে আগমন ঘটেছে হৃদ্মোহিনী কদম ফুলের। কদম আর বর্ষা একে অপরকে আলিঙ্গন করে রয়েছে বহুকাল ধরে।
গাছে গাছে সবুজ পাতার ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার, সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তুলেছে ভিন্নভাবে। বর্ষার মেঘের সাথে মিতালি বলেই কি না, এর আরেক নাম মেঘাগমপ্রিয়। আর নারীর সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করে অনেকেই বলে ললনাপ্রিয়। এ ছাড়া সুরভি, প্রাবৃষ্য, বৃত্তপুষ্প, সিন্ধুপুষ্প, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী প্রভৃতি নামেও কদমের পরিচিতি আছে।
গোলাপ, বকুল, কৃষ্ণচূড়ার মতোই কদম ফুল বাঙালির ভাব-ভাবনার অন্তরিক্ষে হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের গান আজো গ্রামবাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে সিক্ত কোনো বিকেলে তিনটে কদম ফুল হাতে প্রেমিকের অপেক্ষার গল্পগুলো তো চিরায়ত। সেই গল্পে গোধূলিরাঙা আলোয় মন-মহুয়ায় আনন্দের সুর বাজায় অনুগামী কাদম্বিনী। বাতাসে দোল খাওয়া স্নিগ্ধ সতেজ কদম ফুলের তালে তালে পাখিরাও নেচে হয় পাগলপারা। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।
প্রাণ সখীরে-ওই শোন কদম্ব ডালে বংশী বাজায় কে? আর রবী ঠাকুরের এ গান কে না জানে। বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান॥
বর্ষা নিয়ে কবি, সাহিত্যিক, গায়কদের উৎসাহের কমতি নেই। আর এ রূপসী বাংলা ছাড়া বিশ্বের কোথাও বর্ষার এ স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক রূপ চোখে পড়ে না।


আরো সংবাদ



premium cement