সুনামগঞ্জের হাওরে পানি আছে, মাছ নেই
স্থানীয় মৎস্য বিভাগকে হাত করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অবাধে জলাশয় সেচের প্রভাব- তৌহিদ চৌধুরীর প্রদীপ সুনামগঞ্জ
- ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০৫
সুনামগঞ্জের হাওরে যে দিকেই চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। হাওরে এত পানি থাকলেও মাছ নেই। ইজারাদাররা স্থানীয় মৎস্য বিভাগকে হাত করে শুষ্ক মৌসুমে (ফাল্গুন-চৈত্র মাস) হাওরের জলমহাল, খাল, বিল ও ডোবা সেচিয়ে মাছ মেরে নিয়ে যাওয়ার কারণেই এমন দশা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জের হাওর এক সময় মাছেরই রাজ্য ছিল। শুষ্ক মৌসুমে মাছ নিধনের ফলে এই বর্ষা মৌসুমে এখন আর হাটে বাজারে দেশী প্রজাতির মাছ মিলছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০-৩৫ প্রজাতীর দেশী মাছ বিলুপ্তির পথে। বাজার দখল করেছে চাষযোগ্য হাইব্রিড জাতীয় মাছ। একযুগ আগেও বহু প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত এই হাওরে। এখন আর সেসব মাছ চোখে পড়ে না। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অবাধে জলমহাল সেচের কারণে দেশী মাছ বিলুপ্তির পথে। নির্বিচারে পোনা মাছ ধরা, জলমহাল ইজারা দেয়া, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে বর্ষায় মাছের প্রজনন ব্যাপকহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সাথে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ। বিলুপ্তির পথে রয়েছে, রানী মাছ, গুতুম, দারকিনা, চাপিলা, চাটুয়া, চাঁন্দা, বড় চান্দা, গোল চান্দা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশী পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, বাইলা, মেনি, ভেদা, শিং, কৈ, টাকি, শোল, কাংলা, মলা, ঢেলা, কানপোনা, রিটা, পিয়ালি, খৈলশা, টেংরা, কাজলি, ছোট চিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইম, বাগাই, তারা বাইম, কাইক্যা ইত্যাদি। এসব মাছের জায়গা দখল করেছে হাইব্রিড পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, সিলভার, কার্ফু, মিরর কার্প, ঘ্রাস কার্প, সরপুঁটি ইত্যাদি।
সম্প্রতি দেখা গেছে, এই ভরা বর্ষায়ও জেলেরা ভাসান পানিতে জাল ফেলে মাছ পাচ্ছেন না। সারা দিন জাল টেনে, পরিশ্রম করে নামমাত্র কিছু ছোট মাছ ধরে হাওর থেকে প্রায় খালি হাতেই ফিরছেন তারা।
এ দিকে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ পাকনা হাওর ও হালির হাওরের জেলেরা জানান, আগের মতো মাছ নেই হাওর বা নদীতে। হাওরে পাতানো জাল তুলে হতাশ হতে হয় তাদের। কিছু ছোট পুঁটি, চান্দা, বাইলা, তারাবাইম পাঁচ মিশালী মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছের দেখা নেই। জেলেরা বলেন, আগে বর্ষার পানিতে হাওরে রুই, কাতলা, বোয়াল, কালিবাউসসহ অনেক জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন কিছু ইছা, ছোট পুঁটি আর চান্দার গুঁড়া কিছু পাঁচ মিশালি মাছ ছাড়া তেমন কোনো মাছ মিলে না।
গত মৌসুমে জেলার সব চেয়ে আলোচিত জামালগঞ্জ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এর সাথে হাত মিলিয়ে জামালগঞ্জের জলমহাল, নদী, ডোবা বিলের তলা শুকিয়ে মৎস্য নিধন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশ পেলেও তিনি চুল পরিমাণও নড়েননি। দীর্ঘ বছর ধরে জামালগঞ্জ চাকরির সুবাদে ইজারাদারদের সাথে তার সখ্য গড়ে উঠেছে বলে জানান বেশ কয়েক জন জেলে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মিডিয়ায় সাক্ষাৎ দিতে রাজি হননি। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি এসব বিষয়ে জড়িত নই। যখন অভিযোগ পেয়েছি ব্যবস্থাও নিয়েছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা