১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কলাপাড়ায় বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে পারছে না জিও ব্যাগ

ভাঙন ঠেকানোর জিও ব্যাগ তলিয়ে যাচ্ছে নদীতে : নয়া দিগন্ত -

আন্ধারমানিক ও রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধের অংশ। ফলে উপজেলা সদরের সাথে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়ক রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। গইয়াতলা, জালালপুর, নিজামপুর, ধুলাসার, চরবালীয়াতলী, দেবপুর স্পটে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন থামছে না। উল্টো বেশ কিছু জিও ব্যাগ ধসে পড়ছে নদীতে।
সরেজমিন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা গ্রামে গিয়ে বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশটি দেখা যায়। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি বাড়লে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে আগামী মৌসুমে চাষবাস করাই কঠিন হয়ে পড়বে। রাবনাবাদ নদীর তীব্র ঢেউ লেমুপাড়া-চরবালীয়াতলী বাঁধ বিশেষ করে অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে সড়ক বিলীন হলে লেমুপাড়া-চরবালীয়াতলী সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন হবে ইউনিয়ন থেকে।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ১৯৬০-১৯৭০ সালে কলাপাড়ায় ৩৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। রেমালের প্রভাবে উপজেলার পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪৭/৪ পোল্ডারের মিঠাগঞ্জ বেড়িবাঁধের রিভার সাইডের মূল বাঁধ রক্ষায় দেয়া জিওব্যাগ ধ্বসে আন্ধারমানিক নদীতে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁচ গ্রামের মানুষ। ৪৬ পোল্ডারের নীলগঞ্জের গইয়াতলা গ্রামের ভাঙা বাঁধ সংলগ্ন ছয়টি গ্রামের মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। গইয়াতলার রিভার সাইডের বাঁধ সোনাতলা নদীতে ভেঙে পড়েছে। সম্পদ হারানোর আর্তনাদে ক্রমে ভারী হচ্ছে ৪৭ পোল্ডারের মহিপুর ইউনিয়নে সিডরের পর থেকে নিজামপুরের পাঁচ গ্রামের মানুষের। দশ বছর ধরে জমিতে কোন চাষ করতে পারেনি তারা। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে রিং বেড়িবাঁধ করে দেয়।
পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, ধুলাসার ও বালিয়াতলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান, ত্রাণ চাই না শুধু বাঁধটা নির্মাণের দাবি জানাই। বর্ষা মওসুমে পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে গোটা কলাপাড়া উপজেলা। সাগর ও নদীর প্রতিটি জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসতঘর, আবাদি জমি ও মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু।

সূত্র মতে, দেড় যুগের অধিক সময় ধরে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য রাস্তাঘাট, হাজার হাজার একর জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা। কয়েকবার সংস্কার করা হলেও সাগর মোহনা আন্ধারমানিক নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রেমালের আঘাতে উপকূলে ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই রাবনাবাঁধ, আন্দারমানিক ভাঙনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
উপকূলবাসী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তারা শুধু আশ্বাস দেন। জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পরিকল্পিত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী।
মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী জানান, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মৎস্যজীবী। এখন কোনো রকম একটি বেড়িবাঁধ করেছে তা আবার বড় জোয়ার হলে ভেঙে যাবে দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধে নতুন করে জিওব্যাগ দেয়া হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে গৈয়াতলায় নতুন বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হবে। ধুলাসার ও গৈয়াতলা দুই বাঁধে স্থায়ী প্রকল্প ব্লক দেয়ার প্রকল্প তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 


আরো সংবাদ



premium cement