কটিয়াদীতে ২৫০ বছরের পঞ্চায়েত রীতি
- ফখর উদ্দিন ইমরান কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
- ২১ জুন ২০২৪, ০১:৩৫
সামাজিক রীতি ও সম্প্রীতির বন্ধন এখনো অমলিন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে সমাজের সবাই একসাথে কোরবানি দেন। সেখান থেকে সবাই সমাজের নি¤œবিত্ত ও সামর্থ্যহীন মানুষের জন্য একটি অংশ রেখে দেন। এগুলো সংগ্রহ করে পাশেই সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে জমা করা হয়। একের পর এক আসতে থাকে বিভিন্ন কোরবানির গোশত। একসময় তা বিশাল স্তূপ হয়। সবগুলো সংগ্রহ শেষ হলে মেপে মেপে রাখা হয়। পরে একসময় তালিকায় থাকা নাম ধরে ধরে বণ্টন করা হয়। কেউ উপস্থিত না হলেও তার বাড়িতে পৌঁছে যায় গোশত। এমনি এক সামাজিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতির বন্ধন দেখা গেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে।
কটিয়াদী পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়া মহল্লায় প্রায় আড়াই শতাধিক বছরের পুরনো এই রেওয়াজ চলে আসছে। বর্তমান প্রজন্মও এই রীতি ধরে রেখেছে।
আধুনিক সমাজে পঞ্চায়েত সমাজব্যবস্থা এখন আর দেখা যায় না। তবে পঞ্চায়েত হলো সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি। পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন প্রথা হলো পঞ্চায়েত। কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কিছু কার্যক্রম দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রামে এখনো পঞ্চায়েতের ধারা কিছুটা চলমান রয়েছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্বপাড়া মহল্লার এই পঞ্চায়েত প্রথা অনেক পুরনো। সমাজে বৈষম্য দূর করে ঐক্য সৃষ্টি ও ধনী-গরিব বৈষম্য কমিয়ে আনতে এটির প্রচলন শুরু হয়েছিল। যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। পাঁচ শ’ বাড়ির তালিকা তৈরি করে কোরবানির গোশত বণ্টন করা হয়।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মেরাজ মিয়া বলেন, আমি ছোট থেকে এই বণ্টন দেখে আসছি। আমাদের বাপ-দাদারাও এভাবেই পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বণ্টন করেন। ব্রিটিশ আমলের পর থেকে এটি চলে আসছে।
বণ্টনের দায়িত্ব পালন করা শরিফ, মিজান ও আব্দুল্লাহ বলেন, পাঁচ শতাধিক মানুষের তালিকা করে গোশত বণ্টন করা হয়েছে। পাঁচ হাজারের অধিক কেজি গোশত জমা হয়েছে। আড়াই কেজি করে দেয়া হয়েছে। কেউ না এলেও বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। সামাজিক ঐক্য ও ধনী-গরিব বৈষম্য দূর করাই আমাদের লক্ষ্য। এটি চলতে থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা ‘ঘর’ সংখ্যা হল প্রায় ৫০০। প্রতি কোরবানির ঈদে তাদের মধ্যে গড়ে ৪০-৪৬টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি বড় অংশ কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির গোশত দেয়া হয়ে থাকে।
ঈদের দিন সকালে তারা তাদের জবাইকৃত পশুর এক-তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যাবেন। আর বাকি অর্ধেক রাখবেন তাদের নিজেদের জন্য। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেবেন। গোশত জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হয়।
এ পঞ্চায়েতের বা সমাজের যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও গোশত পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও গোশত পান। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের সব ঘরেই কোরবানির গোশত পৌঁছায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা