১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাভী পালনে প্রবাসফেরৎ আনোয়ারের ভাগ্যবদল

খামারে গাভীর যত্ন নিচ্ছেন আনোয়ার : নয়া দিগন্ত -

জীবনের চাকা পরিবর্তন করার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ২০০৫ সালে আনোয়ার পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরব। পরিবারের মায়া ত্যাগ করে মনের ওপর পাথর চাপা দিয়ে সেখানে কাটিয়ে দেন তেরোটি বছর। প্রতিনিয়ত বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানদের জন্য মনের গহিনে চাপা কান্না বিরাজমান ছিল তার। প্রবাস জীবনটা যেন খোলা আকাশের নিচে এক আজব কারাঘার। জীবনযুদ্ধে টিকতে না পেরে ২০১৯ সালে দেশে ফিরেন আনোয়ার। কিন্তু ভাগ্য তার বদলায়নি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন তিনি দেশের মাটিতে গাভী পালন করবেন। এই সিদ্ধান্ত এবং এই উদ্যোগের ফলেই তিনি অবশেষে হাতে পেয়েছেন ভাগ্যবদলের চাবি।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন আনোয়ার। বাবার নাম নুরুল ইসলাম। দেশে ফিরেই সাড়ে চার লাখ টাকায় তিনটি হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু কিনেন। গরুর সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য পাকাঘর নির্মাণ করেন। ঘাস চাষ করেন ৪০ শতাংশ জমিতে। প্রশিক্ষণ নেন এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ফার্মারস ফিল্ড স্কুলে।
খামারি আনোয়ার বলেন, বর্তমানে তার খামারে ছয়টি গরু। দু’টি গাভী থেকে ৪০ কেজি দুধ পান তিনি। স্থানীয় হোটেল, মিষ্টির দোকান ও ব্যবসায়ীরা তার বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে যায়। দুধ থেকে মাসে ৭০ হাজার টাকা আসে তার। মাঝে মাঝেই গরু পরিবর্তন করতে হয়। এ জন্য ভালো লাভের আসায় কোরবানির হাটে চার লাখ টাকায় দু’টি গরু বিক্রি করেন তিনি। গরুর খামারের আয়ে তিনি ৩০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।
আনোয়ার বলেন, অনেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যায় ভাগ্য বদলের আশায়। যে যায় সেও থাকে অসহায়, পরিবারকেও ফেলে যায় অসহায় অবস্থায়। তাই বিদেশে না গিয়ে ওই টাকা দিয়ে দেশেই ভালো কিছু করা সম্ভব। শুধু দরকার মন মানসিকতার পরিবর্তন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: কে এম আসাদুজ্জামান বলেন, এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ফার্মারস ফিল্ড স্কুলের মাধ্যেমে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৪টি গ্রুপে ৪৮৮ জন খামারিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। প্রবাসফেরৎ ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল খামারি ও মহিলাদের সাবলম্বী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মহিষ খামারিরা প্রশিক্ষণ ও সাপোর্ট পাওয়ার পরেও কেল্লার ও উঁচু জায়গার অভাবে ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহিষগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে লালনপালন করতে বাধ্য হচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement