১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আশানুরূপ মাছ না পেয়ে হতাশ দশমিনার জেলেরা

আশানুরূপ মাছ না পেয়ে জেলেদের কষ্ট বৃথা হয়ে যাচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

পটুয়াখালীর দশমিনায় তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার করতে নেমে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে জাল ফেলার পর আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না। ফলে জেলেরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, হাজীরহাট, গোলখালী মৎস্যঘাট এবং বাঁশবাড়িয়াঘাটসহ হাটবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অনেক জেলে বসে আছেন। কেউ মাছ ধরতে জাল নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন। আবার কেউ জাল ফেলে তেমন মাছ না পেয়ে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে জেলের মুখ হয়ে আছে মলিন। কারণ নদীতে ইলিশ শিকারের আয়োজনে তাদের খরচের টাকাই উঠছে না।
উপজেলা মৎস্য অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে কার্ডধারী ১০ হাজার ১৭১ জন বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী জেলে রয়েছেন। আর সরকারি সাহায্য সহযোগিতার আওতায় ভিজিএফের ৬ হাজার জেলে সমুদ্রগামী।
উপজেলার গোলখালী এলাকা থেকে একাধিক জেলে জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামেন মাছ শিকারে। রাতে তিনটি ‘খেও’ (জাল ফেলে) দেয়ার পর অল্প কিছু পোয়া মাছ ও রাম ছোর পেয়ে ঘাটে এসে নোঙর করে দুশ্চিন্তায় বসে আছেন। জেলেরা বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা নদীতে মাছ ধরতে যাইনি। ওই সময় গেলে মাছ বেশি পেতাম। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমে দেখি কোনো মাছ নেই। রাতভর ২-৩ কেজি পোয়া আর মাছ পাইনি। তাও সব ছোট মাছ।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মাছ ধরতে আসা শাহ আলম খাঁ, জাহাঙ্গীর ও লাল মিয়াসহ জেলে হতাশার সুরে বলেন, ‘নৌকা নামাতে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেউ গরু-বাছুর বিক্রি করে আর কেউ ঋণ নিয়ে জাল-নৌকা নামাইছি। তয় নদীতে কোথাও মাছ নাই। গেল বছর প্রতি খেয় ২০-৩৫ কেজি কইরা বিভিন্ন প্রজাতের মাছ পাইছি। এবার দুই খেও দিয়া মাত্র ৫ কেজি মাছ পাইছি।’
তারা আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে অধিকাংশ জেলের মুখ মলিন।
মৎস্য ব্যবসায়ী বাঁশবাড়িয়া ঘাটে মিরাজ খাঁ বলেন, অন্যান্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ ধরা পড়ত। গত বছর অনেক মাছ বেচাকেনা করেছি। অভিযানের সময় কেউ কেউ লুকিয়ে মাছ ধরেছে। মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। অভিযান শেষে ভালো মাছ ধরা পড়বে এ আশায় অনেকে ধারদেনা হয়ে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে হতাশ হচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য মেরিল ফিসারিজ কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের এবং তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে মাছের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।


আরো সংবাদ



premium cement