১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
কর্মকর্তার অপসারণ দাবি কৃষকদের

রাজারহাটে খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে নানা অনিয়ম

রাজারহাট উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন : নয়া দিগন্ত -

রাজারহাট খাদ্যগুদামে ব্যবসায়ীর ধান ট্রাকে যাওয়া শুরু হলেও কৃষকের ধান ভ্যান গাড়িতেও যাচ্ছে না। সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ উঠছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এর প্রতিবাদে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদের অপসারণ ও নতুন তালিকা করে ধান সংগ্রহের দাবিতে রাজারহাট সোনালী ব্যাংক চত্বরে মানববন্ধন করেন ওই এলাকার কৃষকরা। পরে শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ছোট, বড় ও মাঝারি ৩৮ হাজার ৮৫৩ জন কৃষি কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন। চলতি অর্থবছর রাজারহাট উপজেলা খাদ্যগুদামে ৩২ টাকা কেজি দরে এক হাজার ২৮০ টন ইরি-বোরো ধান ক্রয়ের বরাদ্দ দেয় খাদ্য অধিদফতর। গত ১৩ মে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ কৃষকদের অনুপস্থিতিতে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে লটারি দেখিয়ে তালিকা প্রণয়ন করেন।
তালিকায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪১৬ জন ছোট, বড় ও মাঝারি কৃষকের নামে ৩২ টাকা কেজি দরে তিন টন হিসাবে ধান সংগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। ফলে যার এক টন ধানও চাষাবাদ হয়নি- এমন কৃষককেও তিন মেট্রিক টন হিসাবে ধান সংগ্রহের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে যে কৃষকের আবাদকৃত ধানের পরিমাণ ১০-২০ টন, তার কাছ থেকে কোনো ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। এতে উপজেলার ৩৮ হাজার ৮৫৩ জন কৃষি কার্ডধারী কৃষকের মধ্যে মাত্র ৪১৬ জন তালিকায় স্থান পেয়েছেন। অথচ কৃষকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে একজন কৃষকের কাছ থেকে তিন মেট্রিক টনের পরিবর্তে এক মেট্রিক টন হিসেবে ধান ক্রয় করা হলে অন্তত এক হাজার ২৮০ জন কৃষক ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির সুবিধা পেতেন।

এ কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ সময় তারা ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই কৃষকদের অনুপস্থিতিতে লটারি দেখিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহকারী কৃষকের নামের তালিকা বাতিল এবং খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
এ দিকে গত বুধবার খাদ্যগুদামে ট্রাকে করে ব্যবসায়ীর ধান ঢোকানোর ঘটনায় এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, এসব ধান ব্যবসায়ীদের, কৃষকদের ধান নয়। প্রান্তিকপর্যায়ের প্রকৃত কৃষকরা ধান দিতে পারছেন না। স্মারকলিপি প্রদানকারী কৃষকরা বলেন, এই তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হলে প্রকৃত কৃষকরা সুবিধা বঞ্চিত হবেন এবং সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ মোবাইল রিসিভ করেননি। এমনকি সাংবাদিকরা গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদ্যগুদামে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাননি। এ দিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হোসাইন বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অ্যাপসের মাধ্যমে লটারি করা হয়েছে।
উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সদস্য ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, ওই দিনের মিটিংয়ে থাকতে পারিনি। তারা লটারিতে সুবিধাভোগী কৃষকের তালিকাও আমাকে দেননি।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম বলেন, তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়নি। তারা আমার অফিসে মোবাইল অ্যাপসে লটারি করেছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কৃষকদের কোনো তালিকা আমাকে সরবরাহ করেননি। ধান সংগ্রহে যেন অনিয়ম না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement