১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম’

জৈন্তাপুরে হঠাৎ বন্যায় ডুবে যাওয়া বাড়ি-ঘর : নয়া দিগন্ত -


‘পানি যখন বাড়ছিল, উপায় না দেখে আম্মা ও ছোট ভাইকে ফ্রিজের ওপর তুলে দিয়ে আমি চৌকির ওপর দাঁড়াই। পানি যখন আমার নাক বরাবর চলে আসে তখন বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সাহায্য চেয়ে আগে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে। তখন শেষ পোস্টটি লিখি, লাশ উদ্ধার অইমু (হব) হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে (হতে) পারতাম না...হয়তো এইটা শেষ পোস্ট।’ বন্যার পানিতে পরিবারসহ আটকা পড়ে মৃত্যুকে খুবই কাছ থেকে দেখা সাজ্জাদুর রহমান সাজন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার ভয়াবহ রাতের বর্ণনা এভাবেই দিচ্ছিলেন।

গত বুধবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে সাহায্য চেয়ে প্রথম পোস্টটি দেন সাজন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘আমি দৌলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা, দিলু মিয়ার পোয়া (ছেলে), বাড়ি ফেরিঘাট, আমরারে কেউ বাঁচাও, আমরার মরণ সামনে, কেউ বাঁচাও আমরারে। মা ভাই লইয়া আটকি গেছি।’
সাজনের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরত্বে ফেরিঘাট। প্রথম পোস্ট দেয়ার পাঁচ মিনিট পর আক্ষেপ করে দ্বিতীয় পোস্ট দেন, ‘হায়রে ফেরিঘাটের নৌকা, একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি (একটা নৌকা নেই কি বাঁচানোর জন্য)।’ রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তৃতীয় পোস্টে তিনি বাঁচার আকুতি জানিয়ে লেখেন, ‘অনেক স্রোতের কারণে কেউ উদ্ধারের জন্য আসতে পারছে না, সুন্দর এই ভুবনে বাঁচার অনেক ইচ্ছা।’ এর ২৯ মিনিট পর লেখেন, ‘এখনো কেউ উদ্ধারে আইছে না (আসেনি)।’

শাকিল আহমদ নামের একজন ওই কমেন্ট বক্সে জানান, ব্রিজের পূর্ব পাশের নৌকা ব্রিজ পার হচ্ছে না, ফেরিঘাটের দক্ষিণের নৌকা প্রবল স্রোতের জন্য পার করা যাচ্ছে না। এভাবে শতাধিক কমেন্টে তাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করা হয়। রাত ১১টা ৮ মিনিটে সাজন জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে লেখেন, ‘লাশ উদ্ধার অইমু (হব) হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না (হতে পারব না), হয়তো এইটা শেষ পোস্ট।’
পাহাড়ি ঢলের জন্য তীব্র স্রোতের কারণে সাজন ও তার পরিবারকে উদ্ধার করতে আসতে পারছিল না কেউ। পরে স্থানীয় কয়েকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের উদ্ধারে যান। রাত দেড়টার দিকে তারা নৌকা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সক্ষম হন। রাত ১টা ৩৯ মিনিটে সাজন পোস্ট দেন ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি আর আমার পরিবার উদ্ধার।’ সেখানে হাজারখানেক মানুষ স্বস্তির কথা জানিয়ে কমেন্ট করেন।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সাজ্জাদুর রহমান সাজন বলেন, ‘হরিপুরের মামুন ভাই, কমলাবাড়ির ময়না ভাইসহ বেশ কয়েকজন আসেন। পরে রাত ৪টার দিকে আমাদের উদ্ধার করেন তারা। কল্পনাও করিনি বেঁচে ফিরতে পারব।’
২৩ বছর বয়সী সাজন জানান, তিনি স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তার বাবা দিলু মিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে মারা যান। মা আর ১৫ বছর বয়সের ভাইকে নিয়ে তার সংসার।
সিলেটের জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, রাতে আমরা খবর পেয়ে খেয়াঘাট এলাকায় যাই। কিন্তু পানির স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে কোনো নৌকা বা মাঝি ম্যানেজ করা যায়নি। মাঝিরা বলছিলেন, আমরা গেলে মারা পড়ব। ওসি জানান, স্থানীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাদ্দাম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনিও তার বাসার দ্বিতীয় তলায় আটকা পড়েছেন। তবু চেষ্টা করবেন। পরে রাতে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement