উজিরপুরে মাছ চাষিদের মাথায় হাত
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব- উজিরপুর (বরিশাল) সংবাদদাতা
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫
স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উত্তর বড়াকোঠা গ্রামের তারিকুল ইসলাম লোটাসের সংসার। ছেলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আর মেয়ে নার্সারিতে।
সংসারের আর্থিক অনটন কাটাতে বাবার প্রতিষ্ঠান শ্রম-প্রযুক্তি মৎস্য উৎপাদন প্রকল্প (হ্যাচারি) হাতে তুলে নেন তারিকুল। এ বছর ৫০ লাখ টাকা ঋণ করে ১৫ একরে মা মাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পুকুর ভেসে যাওয়ায় এখন সর্বস্বান্ত তিনি। ঋণ কিভাবে শোধ করবেন, সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা দুই সন্তানের এ জনক।
উত্তর বড়াকোঠা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাছের পুকুরের পাড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তারিকুল ইসলাম লোটাস। তার অপলক দৃষ্টি কুকুরের দিকে। কথা বলতে গিয়ে মো: তারিকুল ইসলাম লোটাসের চোখের একপাশ ভিজে উঠছিল। একটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, সংসারের অভাব-অনটন কাটাতে বাবার প্রতিষ্ঠানে মা মাছের চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম এই মাছ অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। লাভ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো।
আর কয়েকদিন বাদে এসব মাছ বিক্রির জন্য পুকুর থেকে ওঠানো হতো। কিন্তু সবকিছুই শেষ করে দিলো ঘূর্ণিঝড় রেমাল। অনেকেই পুকুরে নেট দিয়ে, বাঁধ দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। তারিকুল বলছিলেন, স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন কিভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তা করে কূল পাচ্ছি না।
শুধু তারিকুল নয়, তার মতো একই অবস্থা উজিরপুর উপজেলার সহস্রাধিক মাছ চাষির। এমনটাই বলছিলেন, উজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদার। প্রসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে উজিরপুর উপজেলার আনুমানিক ১১০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মোট আয়তন ২০৩ হেক্টর, সেখান থেকে ২১০ মেট্রিকটন মাছ ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া মাছের মধ্যে ৩০৭ দশমিক ১৯ মেট্রিকটন কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি ২ দশমিক ৫ মেট্রিকটন।
প্রসেন মজুমদার বলছেন, রেমালে উপজেলার সহস্রাধিক চাষির অন্তত ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের সহায়তা করার জন্য সেখানে সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার কোনো বরাদ্দ দিলে তা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
সাতলা গ্রামের খোকন গাইন অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে মাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু রেমালের আঘাতে সব হারিয়ে এখন দিশেহার হয়ে ফিরছেন। তিনি বলেন, আমার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। সংসারের অভাব কাটাতে ১০ বিঘা ঘেরে কার্প প্রজাতির মাছের চাষ করেছিলাম। মাছের যে সাইজ হয়েছে, তা ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। তাতে আমার অন্তত চার থেকে সাত লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমাল আমার সব কেড়ে নিয়েছে।
একই দশা সাতলা ইউনিয়নের অরবিন্দু গাইনের। তিনি বলেন, পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে মাছ চাষ করেছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মাছের ঘের ভেসে গেছে। এখন আমার ঘেরে ১০ হাজার টাকার মাছও নেই।
নিজেদের জমানো টাকা, ধার-দেনা আর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লাভের আশায় মাছ চাষ করেছিলেন আরেক চাষি অমৃত গাইন। ঘূর্ণিঝড়ের পর তার সোনালি স্বপ্ন ফিকে হয়েছে। আবার সব হবে চারপাশের এমন সান্ত¡না বাক্যের মধ্যে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে-ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।
মো: রাসেল পরাগ নামের আরেক মাছ চাষি বলছিলেন, অনুদান দিয়ে আমাদের আবার মাছ চাষের সুযোগ করে দেয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমাদের পথে বসতে হবে।