১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
রেমালের তাণ্ডব

পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধের বাইরের হাজারো পরিবার নিঃস্ব

বিধ্বস্ত ঘরের সামনে শিশু সন্তানসহ একটি পরিবার : নয়া দিগন্ত -

ঘুর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে হাজারো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গাছপালা। ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুর-ঘেরের মাছ। সম্পূর্র্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে সবজির আবাদ। রক্ষা হয়নি আউশের আবাদ। বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত নয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল পটুয়াখালী অতিক্রম করার পরেও বাড়ছে জোয়ারের পানি। অতিরিক্ত জোয়ার পানি উঠে পটুয়াখালী জেলা শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত রয়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহরের অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলা-উপজেলার নি¤œাঞ্চলগুলো। অতিরিক্ত জোয়ারের পানি উঠে অবরুদ্ধ রয়েছে উপকুলীয় অঞ্চলের হাজারো মানুষ।
অপর দিকে রেমালের তাণ্ডবে জেলা-উপজেলাগুলো বিদ্যুৎ, মোবাইল এবং ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যে কারণে রোববার রাত ২টা থেকে সারা দেশের পটুয়াখালীর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ ছিল। সোমবার সন্ধ্যার পরপর পৌর শহরে বিদ্যুৎ সেবা চালু হলেও ধীর গতিতে চলছে মোবাইল এবং ইন্টারসেবা। এ ছাড়া ঝড়ের তাণ্ডবে বিভিন্ন সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যান চলাচল।
কলাপাড়া উপজেলার অন্তত ১২ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরের, যা হাজারো পরিবার। কলাপাড়া উপজেলার কাউয়ার চরের জেলে মুসা জানান, স্ত্রী তানিয়াসহ দুই শিশুকন্যা নিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। ঝুপড়ি ঘরটি মাটির সাথে মিশে গেছে। গবাদিপশু ভেসে গেছে। পরিবারটির সবাই চরম বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছেন। একই দশায় জহিরুলের পরিবার। টিনশেড ঘরটি লণ্ডভণ্ড গেছে।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম জানান, ছয়টি ওয়ার্ডের কমপক্ষে দেড় হাজার পরিবারের বসবাস বেড়িবাঁধের বাইরে। সবাই কমবেশি ক্ষতির কবলে পড়েছেন। একটি এনজিও সংস্থা থেকে মঙ্গলবার দুপুরের পরে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের একই দৃশ্য। সরকারিভাবে কলাপাড়ায় ৭৬০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১৮০ হেক্টর জমির শাকসবজি, ৫৮ হেক্টর জমির পাট, ২৫ হেক্টর জমির পেঁপে, ১০ হেক্টর জমির তিল, ৫০ হেক্টর জমির কলা নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ১০৬ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ১৭৮ হেক্টর জমির আবাদ করা আউশক্ষেত। কুমিরমারা গ্রামের সবজিচাষি সুলতান গাজী জানান, তাদের করলা, ঝিঙে, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, শসাখেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রত্যেক কৃষকের কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এ কৃষকের দাবি। কারো ক্ষতির পরিমাণ লাখ টাকারও বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়াসূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পোল্ডারের বেড়িবাঁধের ২২টি পয়েন্টে অন্তত নয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজকাটা গ্রামের কৃষকরা জানান, তাদের পুরনো বিধ্বস্ত বাঁধসহ স্লুইসগেট এলাকা থেকে লোনা পানি অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। বাঁধের অন্তত ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রেমাল তাণ্ডবে কলাপাড়ার মৎস্য সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অফিসসূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় চার হাজার ৬৯০টি পুকুর ও ৭৭৮টি মাছের ঘের ডুবে ভেসে গেছে মাছ। এতে অন্তত ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, কলাপাড়ায় জরুরিভাবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা, জিআর ২০০ টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
পটুয়াখালী ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান তাদের প্রাথমিক তথ্যে রেমালের তাণ্ডবে জেলায় ৯,১০৫ পুকুর, ৭৬৫টি মাছের ঘের এবং ১২০টি কঁাঁকড়া ঘের প্লাবিত হয়ে মাছ ও কাঁকড়া ভেসে গেছে। এ ছাড়াও ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা কাঁচাপাকা বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বলে জানা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা। এ ছাড়াও পটুয়াখালীতে তিন কিলোমিটার এবং কলাপাড়া উপজেলায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে বলে জানা পাউবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement