১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না জামালপুরের কৃষকরা

প্রতিমণ ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১২৮০ টাকা কৃষক পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা
-

সরকারি নানা নিয়মকানুনের জালে আটকা সাধারণ কৃষক। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রির করতে পারছেন না তারা। এতে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদনদী বিধৌত কৃষিনির্ভর জেলা জামালপুরের কৃষকরা ধানের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবছর সরকার প্রতিমণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে এক হাজার ২৮০ টাকা। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে এ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ থেকে ৯২০ টাকায়। রাস্তাঘাট নেই এমন চর এলাকায় এর চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে জেলার কৃষকের ঘাম ঝরানো উৎপাদিত সোনালি ধানের লাভের টাকা উঠছে কথিত বেপারি নামের মধ্যস্বত্বভোগী ও খাদ্য মজুতদারী চালকল মালিকদের পকেটে।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে খাদ্য অধিদফতর। এর মধ্যে ধান ১২ হাজার ৬০১ মেট্রিকটন, সিদ্ধ চাল ৩৪ হাজার ৪১৪ মেট্রিকটন এবং আতপ চাল এক হাজার ৩৪ মেট্রিকটন।
জেলা খাদ্য বিভাগসূত্রে জানা যায়, গত ১৩ মে থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে জেলার সাত উপজেলায় অন্তত আট সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসসূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জামালপুর সদর উপজেলার দু’টি গুদামে ৩ হাজার ৪৩৩ মেট্রিকটন ধান, ১৭ হাজার ১১২ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ২৬৪ মেট্রিকটন আতপ চাল, সরিষাবাড়ী এক হাজার ৭৫৬ মেট্রিকটন ধান, এক হাজার ৪৩৩ সিদ্ধ চাল, এক হাজার ৪৩৩ মেট্রিকটন আতপ চাল, দেওয়ানগঞ্জে ৮৪৮ মেট্রিকটন ধান, দুই হাজার ১৩০ মেট্রিকটন সিদ্ধচাল, ৫৩ মেট্রিকটন আতপ চাল, ইসলামপুরে এক হাজার ৬১৯ মেট্রিকটন ধান, পাঁচ হাজার ৭৮৭ মেট্রিকটন সিদ্ধচাল, মেলান্দহে দুই হাজার ১৬ মেট্রিকটন ধান, ছয় হাজার ৫২৫ মেট্রিকটন সিদ্ধচাল, ৭১৭ মেট্রিকটন আতপ চাল, মাদারগঞ্জে এক হাজার ৫৫৪ মেট্রিকটন ধান, ৭৭৩ মেট্রিকটন সিদ্ধচাল এবং বকশীগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ৩৭৫ মেট্রিকটন ধান এবং ৬৫৪ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: আসাদুজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) জানান, ধান প্রতিকেজি ৩২ টাকা, অর্থাৎ এক হাজার ২৮০ টাকা মণ, সিদ্ধচাল ৪৫ টাকা, অর্থাৎ মণপ্রতি দুই হাজার ২২০ টাকা, আতপ চাল প্রতিকেজি ৪৪ টাকা। যার প্রতিমণের মূল্য দাঁড়ায় দুই হাজার ১৮০ টাকা।
জেলায় মোট ২২৯টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক-৩৫টি, হাস্কিং-১৭৫টি এবং আতপ চালের আটটি চালকল রয়েছে। এসব চালকলের মালিকরা কথিত বেপারি নামক মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কৃষকদের নিকট কম দামে ধান কিনে মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করছে। আগামী ৩১ আগস্ট ’২৪ পর্যন্ত এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।
মো: আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধান চাষ ভালো হয়েছে। এ ছাড়া সরকার ভালো দাম নির্ধারণ করায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কৃষকরা বলছেন অন্য কথা।
ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বোলাকীপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমরা চর এলাকার মানুষ। ধান আবাদ করে পোষায় না। চর এলাকার মাটি পানি বেশি টানে। পানি খরচ বেশি হয়। সার, বিষ ও কামলা খরচ দিয়ে প্রতিমণ ধানের দাম পড়ে প্রায় এক হাজার ৫ শ’ টেহা। বর্তমানে ধানের বাজার ৮০০ থেকে ৮২০ টেহা।’
‘আমরা ছোট গিরজ (চাষি) সরহারি (সরকারি গুদাম) গুদেমে ২৫ মুন (মণ) একসাথে দেয়া নাগে। মেলা নিয়ম-কারণ পাহা (পাকা) খোলার মধ্যে কটকটা করে শোগেনি নাগে। তাই (সরহারি গুইদেম) সরকারি গুদামে ধান বেছা আমগো অয় না।’
মেলান্দহ উপজেলার জাফরশাহী পচাবহলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দেয়া আমাগোরে কপালে নাই। গুদামে অনেক দালাল-ফালাল আছে তারাই ধান দেয়। আমরা সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে না অজুহাতে নানা হয়রানি ও তালবাহানার শিকার হতে হয়।’
ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার আগে চাল কিনে তার পর ধান। আমাদের এখন ধান বেচা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement