বিলের ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় তৈরি হচ্ছে শত শত পুকুর
- ফারুক হোসেন রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)
- ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে কৃষি ও ফসলি জমির মাটি। মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির ফলে উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের একটি বিলেই সৃষ্টি হয়েছে দুই শতাধিক পুকুর। সরকারি খাল-ডোবা-নালা ও আবাদি জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে এ অঞ্চলের ফসলের মাঠে যত্রতত্র পুকুরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। পুকুর সৃষ্টি হওয়া জমিগুলোর বেশির ভাগই এককালে ফসলি জমি ছিল। এতে করে দিন দিন কমছে চাষাবাদের জমি, হ্রাস পাচ্ছে ফসলের উৎপাদন।
গত শনিবার বিকেলে ভোলাকোট ইউনিয়নের একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাটি কাটার এসব কর্মযজ্ঞ। স্থানীয়রা জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দেহলা গ্রামের বিলের ধানি জামির মাঠে ৩০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, গণস্বাক্ষর সংবলিত স্বারকলিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করে এ ধরনের কর্মযজ্ঞ বন্ধ করা চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫টি অবৈধ ট্রলি ও ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে পাশের আল মদিনা ও জেবিএম ইটভাটায়।
আবদুস সালাম, কালা মিয়া, রাজা মিয়াসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, ভোলাকোট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহম্মদ মানিক, আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল পাটোয়ারী, ইটভাটা মালিক আমির হোসেন ডিপজল, জাহাঙ্গীর কোম্পানি, সিরাজ মিয়াসহ মাটি ব্যবসায়ী এই চক্রটি জমি কিনে সেই জমিতে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফলে পাশের জমি ভেঙে পুকুরে পতিত হচ্ছে। পরে পাশের জমির মালিকও নিরুপায় হয়ে মাটিখেকোদের কাছেই অল্প মূল্যে তার জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষককে জমির মাটি বিক্রি বাধ্য করা হয়। নামমাত্র মূল্যে তখন দুই-তিন ফুট মাটি কেটে নেয়ার কথা বলা থাকলেও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটিখেকোরা ৪০-৫০ ফুট গভীর করে ওসই জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়।
শাহ আলম নামের আরেক কৃষক জানান, ফসলি জমির পুরো মাঠজুড়েই এখন শুধু পুকুর আর পুকুর। পুকুরের কারণে নিজের জমিতেও যেতে পারেন না তিনি। তার কিছু কিছু জমির ধানে পাক ধরেছে। অথচ সেই ধান কেটে না আনা যাবে মাথায় করে, না আনা যাবে নৌকায় করে। তিনি জানান, ভোলাকোট গ্রামের দেহলা, শাহারপাড়া, শাকতলা ও ভাদুর ইউনিয়নের সমেষপুর ও সিরুন্দিসহ পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক যুগ যুগ ধরে এই মাঠের জমিতে চাষাবাদ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাত্র কয়েক বছর আগে এ ফসলি মাঠটি মাটিখেকোদের কুনজর পড়েছে। এখন আর চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, অনেক কৃষকই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলছেন।
মাটিকাটায় অভিযুক্ত দুলাল পাটোয়ারী জানান, সবাই কাটে, আমরা কাটলেই বুঝি দোষ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, আমি অসহায়। আমার কিছু করার নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান জানান, ফসলি জমি কেটে পুকুর বানানো হচ্ছে, এমন বিষয় আমার জানা নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইসলাম জানান, সর্বশেষ মাসিক সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। মাটিকাটা রোধে সরকারি সবধরনের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা