১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঘিওরে আদি ঐতিহ্য ‘তেরাবেরা পার্বণ’ উৎসব

কয়েক গ্রামের নারীরা তেরো পদের শাক তুলে এনে উৎসবে যোগ দেন : নয়া দিগন্ত -

মানিকগঞ্জের ঘিওরে বাঙালির আদি ঐতিহ্যবাহী ‘তেরাবেরা পার্বণ’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখে এ অনুষ্ঠান ঘিরে বংশপরম্পরায় এ উৎসব পালন করেন স্থানীয়রা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ‘তেরো শাকের তেরাবেরা পার্বণ’ নানা আয়োজনে এবার ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।
বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখে গত শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে সরকারের বাড়ির সুবিশাল উঠানে এ পার্বণের আয়োজন করে মানিকগঞ্জ কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বারসিক।
সকালে আশপাশের কয়েক গ্রামের শতাধিক নারী তেরো পদের শাক (বেশির ভাগই অ-চাষকৃত) তোলার উৎসবে যোগ দেন। এর পর স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রায় শত প্রকার বিভিন্ন জাতের ফসলের বীজ উৎসবে বীজ প্রদর্শনী এবং বিনিময় করা হয়। কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আলোচনা সভা হয়। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খুদে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষাণী পারুল সূত্রধর। এতে বক্তব্য দেন, প্রফেসর মনোয়ার হোসেন, পুটাইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রুবিনা আক্তার রুবি, ইউপি সদস্য জসীম উদ্দিন, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, সুবীর সরকার, শামায়েল হাসদা, কৃষক গবেষক মাসুদ বিশ্বাস, ইউথ গ্রিন ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান হৃদয়, কৃষাণী সুবর্ণা বিশ্বাস, আল্পনা সরকার প্রমুখ।
স্থানীয়রা তাদের উৎপাদিত ফসল যেমন ধান-চাল, মুড়ি, কাসুন্দি, শাকসবজি ও আম দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করেন। পরে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পিয়াস, অর্থী, সঞ্চিতা, সাম্মি, বন্যা, শ্রেয়া ও অজয়কে এবং সেরা শাক সংগ্রাহক এবং সেরা ফসলের বীজ প্রদর্শনকারী গৃহিণী সুবর্ণা বিশ্বাস, বাসনা ও কনিকাকে পুরস্কার প্রদান করেন অতিথিরা। এ সময় প্রবীণ কিষাণ ও কিষাণীদের সম্মানার্থে তাদের গায়ে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
আয়োজকরা বলেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতির শেকড় থেকে আসা। তেরাবেরা পার্বণটি প্রধানত হাজার বছর ধরে পুরাণ, ধর্ম, মিথ ও লোকাচারের ভিত্তিতে ওঠে এসেছে। এমন আয়োজন আমাদের নতুন প্রজন্মদেরকে কৃষিভিত্তিক আদি সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজনের ব্যাপ্তি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে করা হবে বলে তারা জানান।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল