১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

একজন রিকশাওয়ালার সংগ্রামী জীবন

একটা কিনলে আরেকটা বাকি থাকে
-

তীব্র তাপদাহ ও কাঠফাটা রোদে রাস্তার মোড়ে ক্লান্ত এক রিকশা চালক। শরীর থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। বার বার মাথার ঘাম গামছা দিয়ে মুছবার চেষ্টা করছেন। গরমের কারণে রাস্তায় তেমন কোনো মানুষজন নেই। কিন্তু এ রিকশা চালকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তার নিজের কোনো রিকশা নেই। ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে কোনো মতে পরিবারের ভরণপোষণ করছেন তিনি। কিন্তু তাতে সংসার যে আর চলছে না।
এ দিকে দিনটা পার হলেই রিকশার ভাড়া দিতে হবে তিনশ’ টাকা। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন তিনি। এখন বেলা প্রায় দুপুর। অথচ উপার্জন হয়েছে মাত্র আশি টাকা। রাতে রিকশার মহাজনকে যে করেই হোক তিনশ’ টাকা দিয়ে রিকশা জমা দিয়ে আসতে হবে। এতে তার নিজের আয় রোজগার হোক বা না হোক।

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলেন তিনি। তার নাম গোলাপ মিয়া (৪৫)। পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্ব বীরগাঁও গ্রামের মাঝিবাড়ির বাসিন্দা তিনি। বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার গোলাপ মিয়ার। মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। বাকিরাও স্কুলে পড়ে। ছেলে মেয়েরা সবাই মেধাবী। লেখাপড়া করতে খুবই আগ্রহী তারা। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বললেন, বাজারে গিয়ে সংসারের জন্য প্রয়োজনের কোনো একটা জিনিস কিনলে আরেকটা বাকি থেকে যায়।
খুবই সহজ-সরল ও পরিশ্রমী মানুষ এ গোলাপ মিয়া। নিয়মিত নামাজ পড়েন। এ শহরে থাকার জন্য নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। আরেকজনের জায়গায় থাকেন পরিবার নিয়ে। এ সরল মানুষটার মুখের দিকে চেয়ে এলাকাবাসীর অনেকেই সাহায্য সহযোগিতা করেন। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ভালো। এ কারণেও অনেকে এগিয়ে আসেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। কিন্তু অভাবের কারণে ছেলেমেয়েরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

গোলাপ মিয়া জানান, তার নিজস্ব একটা রিকশা ছিল। কিন্তু সাত-আট বছর আগে স্ত্রী অসুখে পড়ায় তার চিকিৎসার জন্য সেটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তিনি দীর্র্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, সেই রিকশাটি থাকলে তাকে এতোটা পরিশ্রম করতে হতো না।
রিকশা চালক গোলাপ মিয়া বলেন, সংসার নিয়ে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাকে। তবুও মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, স্বাস্থ্যটা এখনো ভালো আছে। তিনি বলেন, সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে মনটা খারাপ হয়ে যায়। তাদের মুখে ঠিকমতো খাবার জুটাতে পারি না।
এটুকুই কথা হলো তার সাথে। তিনি আর দেরি করলেন না। বসে থাকলে তো চলে না তার। যাত্রীর খোঁজে তাকে রাস্তায় যে নামতেই হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement