গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর বিলুপ্তির পথে
- হেলাল উদ্দিন লিটন তজুমদ্দিন (ভোলা)
- ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০
আধুনিক, ডিজিটাল ও স্মার্ট তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার কৃষ্টি কালচারের সাথে সম্পর্কিত কাচারি ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় কাচারি ঘর ছিল গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। বাইর বাড়িতে বা আঙ্গিনার কাচারি ঘর তখন অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার ব্যবস্থা করা থাকতো। এ ছাড়া, গ্রাম্য শালিস বৈঠকও বসতো ওই কাচারি ঘরে।
কাচারি ঘরটি মূলবাড়ির বাইরে থাকার কারণে এ ঘরটি বাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলতো। এ ঘরেই রাত যাপন করতেন বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথি অথবা কোনো পথচারী, মুসাফির। অনেক সময় জায়গির মাস্টারও এ ঘরে থাকতেন। যে কারণে সেই সময়ে রাতের বেলায় বাড়িতে চুরি-ডাকাতিও কম হতো। কাচারিতে বাড়ির স্কুল কলেজগামী ছেলেরা পড়াশুনা করতেন। অনেক সময় সকালে এটিকে মক্তব হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাড়ির সৌন্দর্য এ কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলায় অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্তের বাড়িতে থাকা এ কাচারি ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীরা বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরে বসে খাজনা আদায় করতেন। যখন দেশে জমিদারী প্রথা চালু ছিল তখনো গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লদের বাড়ির কাচারিতে বসে খাজনা আদায় করা হতো। শালিস-বিচারসহ গ্রামের সকল সামাজিক কাজগুলো পরিচালিত হতো কাচারি ঘর থেকেই। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এদেশে প্রায় বাড়িতেই কাচারি ঘরের প্রচলন ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না।
ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে দুই-একটি বাড়িতে কাচারি ঘর দেখা গেলেও সেগুলো অযতেœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তেমন আর ব্যবহার হয় না। এখন আর কাচারি ঘরে নেই সেই শিক্ষার্থীদের চিরচেনা পড়ার আওয়াজ, বাড়ির মুরুব্বিদের দরাজ গলায় পবিত্র কোরআন পাঠের সুর, অতিথিদের নিয়ে গল্প-আড্ডার আসর অথবা রাতের বেলায় জারি-সারি গান গওয়া ও লুডু খেলার আসর। এখন আর দিনের বেলায় কাজের শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় না কাচারি ঘরে।
চাঁদপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আবুল হোসেন মাস্টার বাড়ির আরিফুর রহমান বলেন, সমাজে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের আড়ালিয়া আব্দুল জব্বার আলী হাওলাদার বাড়িরসহ আরো কয়েকটি বাড়িতে এখনো কাচারি ঘর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এ কাচারি ঘরের কোনো কার্যক্রম এখন আর চলমান নেই। ঘরগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা