যমুনার দুর্গম চরে গৃহহীনদের ঘর পেয়েছেন বিত্তশালীরা
- খাদেমুল বাবুল জামালপুর
- ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া গ্রামটি (কালির চর), যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব ৪০-৪৫ কিলোমিটার। যাওয়ার উপায় শুধু নৌকা অথবা মোটরসাইকেল। যমুনার এই দুর্গম পথ পাড়ি দিলে দেখা মিলবে সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া (কালির চর) আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর। যেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চোখ ধাঁধানো সারি সারি রঙিন ঘর। পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১০টি নলকূপ। কিন্তু এই আশ্রয় প্রকল্পটি যাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষেরা ঘর পায়নি। ঘর পেয়েছে অর্থশালী ও বিত্তশালীরা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে এই সারি সারি রঙিন টিনের ঘর। এই ঘরগুলোতে আশ্রয় মেলেনি অতি দরিদ্র দিনমজুর বারিক পাগলার মতো আরো অনেক ভূমিহীন মানুষের। সরেজমিন ভূমিহীন-গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য নির্মিত ঘরগুলো দেখে মনে হয়েছে, যমুনার বুকে যেন গড়ে উঠেছে এক নতুন সভ্যতা। কিন্তু এই নতুন সভ্যতায় বারিক পাগলার মতো গৃহহীন-ভূমিহীনদের কেন আশ্রয় হয়নি সে কৈফিয়ত কে দেবে?
ভূমিহীন বারিক পাগলা থাকে রাস্তার পাশে নিজের গড়া একটি ঝুপড়ি ঘরে। সরেজমিন সেখানে দেখা যায়, ঝুপড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে বারিক পাগলার ১০-১১ বছরের মেয়ে স্থানীয় নূরানি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী অনিতাকে। তার কাছে জানতে চাই, ওই যে দূরে তোমাদের জন্য সারি সারি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে, তোমরা কেন এই ছন ও পাটকাঠির (সোলা) ঝুপড়ি ঘরে থাকো? উত্তরে অনিতা একটি ঘর দেখিয়ে বলে, ‘ওই যে ২০ নম্বর ঘরটি, ওইটি আমগরে দিছিল। আবার দুই দিন পর বাইর কইরে দিছে।’ অনিতা আরো জানায়, তার বাবা দিনমজুরি করে। সে ওই ঘরের জন্য টাকা ঘুষ দিতে পারেনি। তাই, তাদের ঘরটি অন্যকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ইউপি সদস্যের স্ত্রী জানান, ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে একেকটি ঘর দেয়া হয়েছে। যারা দিতে পারেনি, তাদের কপালে ঘর জোটেনি। যাদের ঘর আছে, যারা টাকা দিতে পারছে- সেসব পয়সাওয়ালাদেরকেই দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। টাকা দিতে না পারায় অধিকাংশ ঘরই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, যাদের ঘরবাড়ি ও ধনসম্পদ আছে, তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তারা থাকেন না। তারা শুধু ঘর দখল করে রেখেছেন। কেন গৃহহীনরা ঘর পায়নি, সেই অভিযোগের তীর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম মণ্ডল, ইউপি সদস্য ফেক্কু মেম্বার ও স্থানীয় প্রভাবশালী হীরার দিকে।
অবশ্য চেয়ারম্যান শাহ আলম মণ্ডল তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লটারির মাধ্যমে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বারিক পাগলা ও তার পরিবারের সদস্যদের ঘর থেকে কেন বের করে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাপারটি আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া মৌজা (কালির চর) এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪০টি টিনের ‘ভিটা পাকা ঘর’ নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এতে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা করে ১০টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু স্থাপনের পর পরই নলকূপগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বারিক পাগলার পরিবারকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি তারও জানা নেই। তবে তিনি জানান, দলিল ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার সুযোগ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা