১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ৪০০ কারখানা বন্ধ

চাহিদা কম থাকায় বেনারসি পল্লীতে কাজের প্রতি মনোযোগ নেই কারিগরদের : নয়া দিগন্ত -

- ভারতীয় শাড়ি আর রঙ সুতার অতিরিক্ত দাম
- ঈদের আনন্দ নেই মালিক কারিগরদের

পাবনার ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে ঈদের কর্মব্যস্ততা নেই কারিগরদের। একসময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে বেনারসি পল্লীর কারিগররা এবার ঈদ মৌসুমেও অলস সময় পার করছেন। দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বেনারসি শাড়ির চাহিদা কমেছে। কারিগররা ঈদ মৌসুমেও অলস সময় পার করছেন। বেনারসি পল্লীকে ঘিরে গড়ে ওঠা শাড়ির মার্কেটও প্রায় ক্রেতাশূন্য। বেনারসি পল্লীতে ৪৫০টি কারখানার মধ্যে এখন চালু আছে মাত্র ৫০টি। বাকি ৪০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠা শত বছরের পুরনো ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসি পল্লী ঈদ এলেই তাঁতের খটখট শব্দ আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো। তবে এবার ঈদে ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকার চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। পৌর শহরের বেনারসি পল্লী ফতেহমোহাম্মদ এলাকায় কারিগরদের কাজের তৎপরতা নেই। ঈদকে ঘিরে বেনারসি পাড়ায় কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই।
বেনারসি তাঁতের মহাজনরা জানান, এখানে একসময় ৪৫০টি বেনারসি কারখানা ছিল। হাজার হাজার কারিগর এ কাজে জড়িত ছিল। এখন মাত্র ৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। ভারতীয় নিম্নমানের শাড়িতে দেশীয় বাজার সয়লাব ও দফায় দফায় সুতা, চুমকিসহ তাঁতসামগ্রীর দাম বাড়ায় লোকসানে পড়ে অনেকেই বেনারসি তাঁতশিল্প থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন।

বেনারসি পল্লির গাউছিয়া মার্কেটের বেনারসির মালিক সাঈদ হোসেন বলেন, তাঁর কারখানায় ২২টি তাঁতের মধ্যে এখন মাত্র পাঁচটি চলছে। ঈদে শাড়ির কোনো চাহিদা ও অর্ডার নেই। আগে এখানকার শাড়ি টাঙ্গাইল ও ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ীরা কিনতেন। এবার ঈদে তারা কোনো অর্ডার দেননি। এবার ভারত থেকেও কোনো অর্ডার আসেনি। প্রতি বছর এই সময়ে ভারতেও ব্যাপক অর্ডার পাওয়া যেত।
আল-মদিনা বেনারসি সিল্ক হাউজের মালিক সেলিম বেনারসি জানান, আগে ঈদ এলেই দিনরাত কাজ করতে হতো শ্রমিকদের। শাড়ির ব্যাপক চাহিদাও ছিল। এখন বাজারে ভারতীয় শাড়ি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের শাড়ির চাহিদা কমে গেছে। বিদেশী শাড়ির সাথে এর পার্থক্য হলো- ঈশ্বরদীর বেনারসি শাড়ি হ্যালো লুমে বুনানো হয়। ফলে গুণগতমান ও টেকসই অনেক বেশি হয়। বাহারি ডিজাইনের জন্য এ বেনারসি শাড়ি সারা দেশে এক নামে পরিচিত।

শামীম বেনারসি কারখানার স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন বলেন, বেনারসি শাড়ির ব্যবসা ধ্বংসের পথে। অন্য বছর ঈদে কমবেশি শাড়ির চাহিদা থাকত এবার কোনো ধরনের চাহিদা নেই। ব্যবসাবাণিজ্য খুবই খারাপ। কারিগরদের বেতন দিতে পারছি না। ভারতীয় শাড়ি বাজার দখল করে ফেলেছে।
ঈশ্বরদী বেনারসি তাঁতি সমিতির সভাপতি ওয়াকিল আলম বলেন, প্রতি বছর ঈদে বেনারসি শাড়ির যে চাহিদা ছিল এবার তার ৬০ ভাগও নেই। এখানকার বেশির ভাগ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগরদের তৈরি বেনারসি শাড়ির গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। তাই দাম ভারতের শাড়ির চেয়ে বেশি। কিন্তু শাড়ির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কারিগররাও এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, সরকারি উদ্যোগে তাঁতিদের মধ্যে ঋণসুবিধা দিয়ে এ বেনারসি পল্লীর কারখানাগুলো চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement