১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দাম অর্ধেক তবুও নেই ক্রেতা

পিরোজপুরের পাইকারি বাজারে অপরিপক্ব তরমুজ

পিরোজপুরের সন্ধ্যা নদীতে মিয়ারহাটে ভাসমান পাইকারি তরমুজ বাজার : নয়া দিগন্ত -

তরমুজ একটি সুস্বাদু ফল। আমাদের দেশে তরমুজের চাহিদা অনেক। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সারা দেশে বেড়েছে মৌসুমি ফল তরমুজের চাহিদা। এই সুযোগে দামও বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পিরোজপুরে এখন তরমুজের দাম অর্ধেকে নামলেও তেমন দেখা নেই ক্রেতার। অলস সময় পার করছে বিক্রেতারা। মার্চের শুরুতে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা দরে। রমজান শুরু হওয়ার পর দাম আরো বৃদ্ধি পায়। তবে বেশি দামের পাশাপাশি তরমুজ অপরিপক্ব হওয়ায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই তরমুজের প্রতি। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরমুজ ‘বয়কটের’ ডাক আসায় ফলটির আরো বেচাকেনা কমে যায়।
মাত্র দশ থেকে পনের দিনের ব্যবধানে সেই তরমুজের দাম নেমে আসে অর্ধেকে। কিন্তু তারপরও তরমুজের দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য। আশানুরূপ বিক্রি না থাকায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে তরমুজের দামে ধস নেমেছে। ফলে ক্রেতা সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রোজার শুরুর দিকে বাজারে তরমুজের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্রেতা সঙ্কটে আছেন বলে জানান পিরোজপুরের মিয়ারহাট পাইকারি বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার মিয়ারহাট পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে এই ভাসমান বাজার। আগের রাত থেকে ট্রলার ও নৌকাযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই বাজারে তরমুজ আসে। ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে জমে উঠে বাজার। এই বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসে ট্রলার অথবা নৌকায় করে। ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাসমান বাজারে নৌকায় তরমুজ সাজিয়ে বসে আছেন পাইকারি বিক্রেতারা। এখন ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। তরমুজের সরবরাহ বেড়ে গেলেও বিক্রি কম। গত কয়েক দিনের তুলনায় দামও কমেছে। কিন্তু তরমুজের দামে ধস নামায় ক্রেতা সঙ্কটে পড়েছে তরমুজ বিক্রেতারা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তরমুজের প্রতি আগের চেয়ে চাহিদা অনেকটা কমেছে ক্রেতাদের। চড়া দামে বিক্রির পরিবর্তে লোকসানের মুখে পড়তে পাড়ে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা পর্যায়ে গিয়ে তরমুজের দাম বেড়ে যায়। পাইকারি কিনে নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজি মূল্যে বিক্রি করায় মানুষ তরমুজ কম কিনছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য কেউ তরমুজ কিনতে চায় না। এ জন্য অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার লাখ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।
পাইকারি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর বলেন, এবারে তরমুজ ব্যবসায় প্রচুর লোকসান হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে খুচরা দোকানদাররা পিস হিসেবে কিনে নিলেও তারা কেজি মূলে বিক্রি করেছে রোজার প্রথম দিকে। এখন পিস হিসেবে বিক্রি করলেও ক্রেতাদের মনে পূর্বের দামের আতঙ্ক চলছে। এখন অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করলেও ক্রেতা তরমুজ খেতে চায় না।
একাধিক তরমুজ ক্রেতা জানান, পবিত্র রমজান মাসকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব তরমুজও বাজারে এনেছে। ওই তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে কেটেছি। তখন দেখি তরমুজের মধ্যে লাল রঙের পরিবর্তে সাদা রঙ। তাই এখন ক্রেতারা তরমুজ কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তরমুজ আড়তদার মকবুল হোসেন বলেন, এখন তরমুজ খাওয়ার উত্তম সময়। এখন তরমুজের আমদানি থাকলেও ক্রেতা না থাকায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে আমাদের। এ বছর আমার ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
জেলার কৃষিবিদ চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, এই সময়টা তরমুজ পরিপক্ব হওয়ার উপযুক্ত সময়। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত পরিপক্ব হওয়ার মৌসুম। কিন্তু আমাদের অনেক অসাধু ব্যবসায়ী তরমুজ পরিপক্ব হওয়ার আগেই বাজারে নিয়ে আসছে।
কাউখালীতে তরমুজের বাজারে ধস
মাইকিং করে বিক্রি
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, কাউখালীতে তরমুজের বাজারে ধস নেমেছে। ক্রেতারা তরমুজ ক্রয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তরমুজ পচনশীল তাই তরমুজ ব্যবসায়ীরা কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সোমবার কাউখালী হাটের দিনে মাইকিং করে তরমুজ বেচাকেনা করছে। এক একটি ছোট তরমুজ ৫০ টাকা, মাঝারি তরমুজ ১০০ টাকা ও সবচেয়ে বড় সাইজের তরমুজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তরমুজ ব্যবসায়ী চান মিয়া বলেন, তরমুজ বেশি দিন রাখা যায় না এবং দাম বেশি থাকার কারণে কোনো ক্রেতা তরমুজ কিনতে আসে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সামান্য লাভে পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছি। গত এক সপ্তাহ আগে যে তরমুজের দাম ছিল ৩০০ টাকা একই তরমুজ আজকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকায়।
তরমুজ ক্রয় করতে আসা আবুল হোসেন বলেন, এর আগে বেশি দাম থাকায় আমরা তরমুজ ক্রয় করতে পারিনি। আজকে বাজারে তরমুজের দাম কম থাকায় আমার মতো সবাই তরমুজ ক্রয় করতে পারছে। সাধারণ জনগণের দাবি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের ভিতরে চলে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement