১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চুনারুঘাট হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলে টাকা দিলে

চুনারুঘাট হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে; কিন্তু সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা : নয়া দিগন্ত -

নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করেই রোগী বহনে নেয়া হয় ৫০০ থেকে হাজার টাকা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে; কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালের সামনে বিশাল জায়গা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সগুলো গোপন করে রাখা হয় হাসপাতালের পেছনের পরিত্যক্ত জায়গায়। ফলে জরুরি সময়ে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে হবিগঞ্জ ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না।
অবশ্য রোগীর স্বজনরা যদি বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি হন, তা হলে অ্যাম্বুলেন্স সহজেই মিলে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের দালালরা দেনদরবার করে ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। অধিক ভাড়া আদায়ের জন্য দালালদের মাধ্যমে চলে নানা অপকৌশল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় মতো অ্যাম্বলেন্স বের না করায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কিন্তু এতে কারো কোনো বিকার নেই। সরকারের নির্ধারিত ভাড়ায় এ হাসপাতাল থেকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স চালক তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া চুনারুঘাট পৌরসভার মধ্যে ২০০ টাকা এবং পৌরসভার বাইরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১০ টাকা করে। তবে নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করেই চুনারুঘাট পৌর শহরের মধ্যে রোগী বহনের জন্য ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। জেলার বাইরে রোগী বহন করা হলে তার জন্য ভাড়া নেয়া হয় স্থানভেদে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা বলেন, অ্যাম্বুলেন্স থাকবে প্রকাশ্যে। অথচ অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয় লুকিয়ে। সম্প্রতি চুনারুঘাটের রানী কোট গ্রামের জনৈক নারী অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর আহত হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে চুনারুঘাট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তখন রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা পাগলের মতো এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে একটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। তখন অ্যাম্বুলেন্স চালক তাজুল ইসলাম দালাল মারফত ওই রোগীর স্বজনদের সাথে দরকষাকষি করতে থাকে। দীর্ঘ সময় নানা টালবাহানার পর স্থানীয় আরেক অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আহত ওই নারীকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে চালক তাজুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সরকারি নিয়মেই ভাড়া নিচ্ছেন। নিয়মেরই বাইরে কোনো কিছুই করেন না। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স চালক আমি একা। আমারও তো রেস্টের প্রয়োজন আছে।
রাকিব আহমেদ তন্ময় নামে এক ব্যক্তি জানান, গত সপ্তাহে তার এক রোগীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আট হাজার টাকা দাবি করেন চালক তাজুল ইসলাম। আরেক ভুক্তভোগী হাসান চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের এই সরকারি অ্যা¤ু^লেন্স সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়ায় চলে না। এ অ্যা¤ু^লেন্স চলে চালকের মনের মর্জি মতো। আমরা অসহায় রোগী নিয়ে তার কাছে জিম্বি হয়ে যাই। অধিক বিপদে পড়া রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে চালক সুযোগ বুঝে অধিক ভাড়া দাবি করে বসেন। স্থানীয় রোগীদের অনেকেই এই চালকের বদলি চান। তারা বলেন, একই হাসপাতালে এই চালক প্রায় ২২ বছর ধরে কর্মরত।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলীমা রায়হানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অনিয়ম হলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের টিএইচও ডা: মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement